আমিনুর রহমান সুলতান
নজরুলের গানে তুমি পেয়েছিলে
জয় বাংলার প্রাণের ধ্বনি
তাকে তুমি তুলে দিলে
সংগ্রামীর কণ্ঠে কণ্ঠে
স্বাধীনতার সেস্নাগানে মুক্তির মিছিলে।
মুক্তির জন্যই সংগ্রামী যে পথ সে পথ
দীর্ঘই হয়, অন্ধকারও;
মানুষের রক্তে ভেজা।
অথচ এ-পথ পায়ে নিয়ে স্বাধীনসত্তায় বাড়ি ফেরার উল্লাসে
তুমি তাঁকে চিনিয়েছো,
মাথা উঁচু করে হেঁটেছে বাঙালি
সাড়ে সাত কোটি।
সাতই মার্চ তোমার উজাড় করা ভালোবাসা
সত্তায় সাহসী স্বপ্ন পেয়ে যায় অসিন্তত্বে পূর্ণতা
মিছিলে ধ্বনিত হয় মুক্তিমন্ত্র
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার অপূর্ব বন্ধনে
ছুটে চলা পথঘাট, হাট-মাঠ, খাল-বিল, নদী-নালা
মাড়িয়ে ঝোপঝাড় গড়েছে অ্যাম্বুশ,
শত্রম্ন শিবিরে গেরিলা আক্রমণ
কখনো সম্মুখযুদ্ধ। লক্ষ্য এক ও অভিন্ন
ছাবিবশে মার্চের প্রথম প্রহরে তোমার ঘোষিত
স্বাধীনতা যার নাম।
মৃত্যুময় একাত্তর
তারপরও প্রবল বিক্রমে বাড়ায়
রক্তের উত্তাপ
মনে জাগে আলোড়ন
বুকে চাপা মাটি অসিন্তত্বে অসিন্তত্বে মিশে যায়।
বোবা অস্ত্র সেও অসিন্তত্বের ভাষা বোঝে
বড়ই আপন সে শত্রম্নর মুখোমুখি
যেন বোবাই বোবার দুঃখ বোঝে।
প্রিয়তমা আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে
বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজয় অর্জন নিয়ে
ঘরে ফেরে একাত্তরের ষোলোই ডিসেম্বর।
তুমি যা দিয়েছো জীবনমুখী
সংগ্রামের সাথে বেড়ে ওঠা
সন্ধ্যা থেকে ভোর
ভেতরে ভেতর বয়ে চলা খরস্রোতা নদী।
তারপরও দারুণ অন্ধকার নেমে আসে
পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট
তাকে কোনোভাবেই ঘটনা বলা যাবে না
বিপর্যয়ের মুখে কেটেছিল
কালো রাত।
জোছনা ছড়াবে না আর
এরকমই মনে হয়েছিল
প্রতিবাদী মিছিল ছিল না তাই
তোমার সপক্ষে দাঁড়াবার
পিতা তোমার রক্তের ঋণ আমাদের চেতনার ঘর
ফসলের ভরা ক্ষেত হয়ে ওঠে
তখন বুঝিনি।
আমাদের বোধ এভাবেই ভোঁতা হয়ে হারিয়েছে
মিছিলের শক্তি ও সাহস।
মানুষ কেন যে ভুলে যায় আপন সত্তার গান
স্মরণের দিন।
তোমার প্রজন্ম ঘুমিয়ে যায়নি পিতা
চেতনার আলোয় আঁধার কেটে কেটে
দাঁড়িয়েছি শুভ্র মেঘের হাওয়ায়
মায়ের সবুজ আঁচলে ফুটেছে রক্তজবা
পঁচাত্তরের গভীর ক্ষত আর শোক তাই পিতা
থামাতে পারেনি বহমান চেতনার স্রোত
চেতনার নদী মরে না
বয়ে যায় নিরবধি
পিতা আমাদের স্বপ্ন ও সাহস ভোর হয়ে জেগে আছে
যেভাবে একুশে জেগেছিল ভাষার শহিদ ও সংগ্রামী যাঁরা
ফাগুনের আগুন নিয়ে দ্রোহী
একাত্তরের উত্তাল মার্চে জয় বাংলার মিছিল হয়ে
জেগেছিল সংগ্রামী জনতা
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধুর হুংকারে নেমেছিল
রণাঙ্গনে বীর মুক্তিযোদ্ধা।