স্মারকলিপি

মুজতবা আহমেদ মুরশেদ

শ্রাবণের মেঘমন্দ্রীত কণ্ঠে একটি উচ্চারণ, বঙ্গবন্ধু, আমরা ভালো নেই। আমরা ভালো নেই কেউ, ভালো নেই তোমার সোনার বাংলায়! না বৃক্ষ, না নদী, না পাখি...কেউ ভালো নেই। সমস্বরে বলি, আমরা আসলেই কেউ ভালো নেই বঙ্গবন্ধু।

তুমি তো জানো না বঙ্গবন্ধু যখন তুমি অন্তরে গুনগুন করে সুর ভাঁজছিলে, ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি, ভাঙলো ঝড়ে’... ঠিক তখুনি সরীসৃপহিংস্র বুলেটে তোমার বুক ঝাঁজরা হয়ে যাবার কিছু পরে তোমারি বাংলায় রাসেল নামের এক নিষ্পাপ কিশোর তার পিতার সাথে, একটি অকলুষ কিশোর তার মাতার সাথে গুলিতে স্তব্ধ হয়ে গেছে ১৫ আগস্টের শেষ যামিনীতে ।
 
হায়, ও আর কোনো দিন ফিরবে না ।

তুমি তো জানো না এখন দেশজুড়ে এমন অসংখ্য শিশু... এমন অসংখ্য কিশোর আগুনে, গুলিতে, চাকুতে লাঠির আঘাতে আঘাতে মরছে আর মরছে। কী প্রাণের আকুতি লাশের! ওরা নদী ফুঁড়ে জেগে ওঠে ডাকে দিগন্ত বলয়ে, ‘আমাকে কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা লোকেরা খুন করে গেছে।’

তোমার কি মনে আছে বঙ্গবন্ধু সেই একাত্তরে পাকিস্তানে তোমার জেলখানার বাইরে... তোমার শোবার ঘরের কিছুটা দূরে দানবীয় অতল অন্ধকার কবরটির কথা? নিশ্চয়ই যাওনি ভুলে।

জানো, অমোন কবরের ছাপচিত্র এখন আমাদের প্রতিদিনের স্বপ্নে, আমাদের বাসস্থানের পাশে নিয়ত ওঁৎ পেতে মহা আহ্লাদে হাসে।

আমরা ভালো নেই বঙ্গবন্ধু। হে বাঙালি মহাবীর, আমরা ভালো নেই।

তবে আমাদের কারো কারো অনেক সুখ। তাহাদের গোলাভরা ডলার। তাহাদের গোলাভরা মস্ত গাড়ি, আকাশ ছোঁয়া উঁচু উঁচু বাড়ি। আর আমাদের সন্তানদের পকেটের সেলফোনে বিকলাঙ্গ দিনলিপি বিষাক্ত পুঁজমাখা ঘায়ে জড়াজড়ি করে শুয়ে। আর আমাদের মুক্তকথাগুলো ধারালো ছুরির আঘাতে ফালাফালা। ভয়াবহ ক্ষতবিক্ষত হয়ে সেসব অচেনা হয়ে গেছে। চেনাই যায় না তাদের। চেনাই যায় না।

ও আমার জাতির পিতা, জানো এমন অচেনা জীবনের বাঁকে খুব চেনা লাগে... খুব খুব কানে ভেসে আসে তোমার বজ্রকণ্ঠখানি...খুব মন চায় তোমাকে প্রাণপণে ডাকি সব বায়ু বুকে করে সঞ্চার, ‘একবার বঙ্গবন্ধু, আবারো একবার এইখানে... এই শ্যামল দেশে ভরা শ্রাবণের রাতে এসে ডাক দিয়ে যাও...’ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

SUMMARY

1210-4.jpg