মুহম্মদ নূরুল হুদা
মুজিবের মুখ মানে বাঙালির মুখ
মুজিবের মুখ মানে বাঙালির সুখ
মুজিবের মুখ মানে নদী আঁকাবাঁকা
মুজিবের মুখ মানে প্রগতির চাকা
মুজিবের মুখ মানে নৌকার পাল
মুজিবের মুখ মানে কৃষকের হাল
মুজিবের মুখ মানে জেলেজোলাতাঁতী
মুজিবের মুখ মানে বাঙালির জ্ঞাতি
মুজিবের মুখ মানে হালের লাঙল
দাড়ীমুখে সারিগান পাহাড়িয়া ঢল
মুজিবের মুখ মানে ধান আর পাট
ধনধান্যপুষ্পময় ফসলের মাঠ
মুজিবের মুখ মানে খোলা মতামত
মুজিবের মুখ মানে মুক্তির পথ
মুজিবের মুখ মানে মুদ্রা সচল
মুজিবের মুখ মানে যুক্তির বল
মুজিবের মুখ মানে মেহনতী মুখ
মুজিবের মুখ গণমানুষের মুখ
মুজিবের মুখ মানে জনতার মুখ
মুজিবের মুখ নয় ক্ষমতার মুখ
মুজিবের মুখ মানে নেতার ভাষণ
মুজিবের মুখ মানে পিতার শাসন
মুজিবের মুখ মানে আদর সোহাগ
মুজিবের মুখ মানে সমতার ভাগ
মুজিবের মুখ মানে মমতার দাবি
মুজিবের মুখ মানে সমতার চাবি
মুজিবের মুখ মানে গিরি সমতল
মুজিবের মুখ মানে সমুদ্র অতল
মুজিবের মুখ মানে চাষী আদিবাসী
পাহাড়ে ও সমতলে মানুষের হাসি
মুজিবের মুখজোড়া স্বাধীনতা আাঁকা
মজিবের মুখে সব গোত্র পতাকা
মুজিবের মুখ তাই প্রমিত বাঙালি
বাংলা বাগান আর মুজিব যে মালী।
জাতিপিতা
তোমার আগে মানুষ ছিল, অনেক মানুষ
তোমার পরে থাকবে মানুষ, অনেক মানুষ
তোমার-আমার আগে-পরে অনেক মানুষ
সব মানুষের মধ্যে মানুষ একলা মানুষ
বিশ্বমানুষ দৃশ্যমানুষ সোনার মানুষ
একলা তুমি একলা আমি বেজোড় মানুষ
বেজোড় মানুষ সজোড় হলে আদম-হাওয়া
হাবিল-কাবিল ভাইবেরাদর আসা-যাওয়া
একলা মানুষ একলা তবু যায় না পাওয়া
যেমন তুমি একলা মানুষ শিশুমানুষ
পীর-খাদেমের বংশে আসা বিশ্বমানুষ
বইগার আর মধুমতির যিশুমানুষ
বঙ্গযিশু হরিকেলের মাটি খুঁড়ে
গড়লে ভিটা গঙ্গাপলির ভুবনপুরে
ভিটার পাশে হাজার ভিটা কাছে-দূরে
এক ভিটাতে অনেক ভিটা অনেক বাড়ি
খড়ের বাড়ি শস্যবাড়ি শনের বাড়ি
দালানবাড়ি কোঠাবাড়ি ভুবনবাড়ি
খাড়ির পাশে ছোট্র বাড়ি টঙের বাড়ি
পাটখড়ি আর নাড়ার বেড়া জোড়াবাড়ি
জোড়বেজোড়ের চালচুলোহীন মাটির বাড়ি
(শেষঠিকানা সেই সে চেনা মাটির ঘরে
যখন তোমার দশদিকেই থরেথরে
সোনাদানা হীরের কণা নড়ে চড়ে)
পদ্মাচরে নতুন ঘরে যখন তুমি
রাষ্ট্র হলো পিতা তুমি জনক তুমি
একটি তুমি দুইটি তুমি অনেক তুমি
অনেক তুমি অনেক আমি অনেক জ্ঞাতি
তুমি যখন তোমার জ্ঞাতি আমার জ্ঞাতি
অনেক জ্ঞাতি একমোহনায় একটি জাতি
জ্ঞাতিপ্রিয় তুমি-আমি বদলপ্রিয়
আমার সঙ্গে তোমার সঙ্গে মিলনপ্রিয়
ব্যক্তি তখন ব্যক্তি তো নয় ব্যষ্টিপ্রিয়
মানুষ তখন বদ্লামানুষ শ্যামলা মানুষ
বিলে-ঝিলে ফোটা মানুষ শাপলা মানুষ
তামাটে এক জাতিমানুষ লাঙ্গলমানুষ
শস্যমানুষ বশ্যমানুষ মাটিমানুষ
রৌদ্রে-জলে ধোয়া পরিপাটি মানুষ
গাছের ছায়ায় মাদুর-পাতা শোয়া মানুষ
সেই মানুষের মাতাপিতা গঙ্গাধারা
জলের জটা রৌদ্রছটা শশীতারা
কিষাণপিতা কিষাণ-মাতার নয়নতারা
সেই তারাটির জন্যে ব্যাকুল বঙ্গ-সাগর
চাষীমজুর কিষাণ-শ্রমিক বামুন-ধাঙড়
বিশ্বজোড়া বাঙলিরা ভাইবেরাদর
সেই মানুষটি অগ্রযোদ্ধা মুক্তমানুষ
জীবনজয়ের মুক্তিযুদ্ধে যুক্তমানুষ
শোষণমুক্ত মানবজাতির স্বপ্নমানুষ
মানবতার পক্ষে চির বর্মমানুষ
কর্মধর্মে বিশ্বাসী এক কর্মমানুষ
মানবধর্মে দীক্ষিত এক ধর্মমানুষ
সবার চোখে সবার বুকে সেই সে মানুষ
সহস্র নয় অজস্র নয় একটি মানুষ
বিশালদেহী চওড়া সিনা বজ্রমানুষ
বুকজোড়া তার স্বপ্নশিখা মানুসরতন
শুভ্র শুদ্ধ ক্রশে বিদ্ধ প্রমুক্ত মন
বিশ্বমাতার কোলজোড়া এক অমূল্য ধন
না-হীরা না-মুক্তোদানা না-মাণিক্য
না-জহুরী না-জহরত, কিন্তু বৃক্ষ
বটবৃক্ষ, বঙ্গবৃক্ষ, সাক্ষ্য দিচ্ছে অন্তরীক্ষ
আকাশজোড়া ফোটা সে এক শাপলামানুষ
সাগরজোড়া সাঁতার-কাটা ঊর্মিমানুষ
গিরিচূড়ায় আরোহী এক চূড়ামানুষ
চূড়ামানুষ বিশ্বমানুষ জন্মপিতা
শাপলাদেশে শাপলাজাতির শাপলাপিতা
সার্বভৌম বাংলাদেশর রাষ্ট্রপিতা
পদ্মাপারে বীরবাঙালির জাতিপিতা।
জন্মবন্ধু
বঙ্গভুমির জন্মবন্ধু
মানববরণ ফুলে,
তুমি আমার কিষাণবধূর
শস্যবরণ দুল।
তুমি আমার চৈত্রপলির
তৃষ্ণাবিধুর বুক;
তোমার বুকে গঙ্গাপদ্মা
উত্তাল, উন্মুখ।
তুমি আমার জন্মজাতির
পললভূমির পিতা,
তোমার বুকে লোকবাঙালির
কোরান-পুরাণ-গীতা।
ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-জ্ঞাতি
জাতি-উপজাতি
কৃষক-শ্রমিক-রাজনীতিবিদ
গায়েন-জোলা-তাঁতি
তুমি আমার সকল পেশার
ব্যপ্ত গণমন,
তুমি আমার হালট-জমির
হঠাৎ গুপ্তধন।
তোমার মাঝে মুক্তি মাগে
কূল-উপকূল-ভূমি-
তোমার রূপে মুক্ত আমি,
আমার রূপে তুমি।
৯-১০.৮.৯৯