‘আমি যেনো কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি’মোস্তাক হোসেন : ‘সমবেত সকলের মতো/ আমিও গোলাপ ফুল খুব ভালোবাসি/ রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সে সব গোলাপের একটি গোলাপ/গতকাল আমাকে বলেছে/ আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি/ আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি/ শহীদ মিনার থেকে খসে পড়া/ একটি রক্তাক্ত ইট/ গতকাল আমাকে বলেছে/ আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি..।’ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা ও বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ডের পর এক বছর পর ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত এক সাহিত্য সম্মেলনে কবি নির্মলেন্দু গুণ ‘আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি’ শীর্ষক কবিতায় বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গভীর আবেগময় লেখা এই কবিতাটি পাঠ করেছিলেন। দেশে তখন সামরিক শাসন চলছিল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে দেশে হত্যা, ক্যু ও পাল্টা ক্যু-এর রক্তাক্ত রাজনীতির ধারাবাহিকতায় ’৭৬ সালের ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের রক্ত চক্ষুর পরোয়া না করে কবি নির্মলেন্দু গুণ সাহসিকতার সঙ্গে দীর্ঘ এই কবিতায় বঙ্গবন্ধু হত্যা ও বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধের প্রতীকী প্রতিবাদ তুলে ধরে লিখেছিলেন-‘সমবেত সকলের মতো/ আমিও পলাশ ফুল খুব ভালোবাসি/ ‘সমকাল’ পার হয়ে যেতে/ সদ্য ফোটা একটি পলাশ/ গতকাল কানে কানে/ আমাকে বলেছে/ আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি/ আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি/..শাহবাগ এভিন্যুর ঘূর্ণায়িত জলের ঝরনাটি / আর্তস্বরে আমাকে বলেছে/ আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি/ ...সমবেত সকলের মতো/ আমারও স্বপ্নের প্রতি পক্ষপাত আছে/ ভালোবাসা আছে/ শেষ রাতে দেখা একটি সাহসী স্বপ্ন / গতকাল আমাকে বলেছে/ আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি../ এই বসন্তের বটমূলে/ সমবেত ব্যথিত মানুষগুলো সাক্ষী থাকুক/ ..আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি/আমি আমার ভালোবাসার কথা বলতে এসেছিলাম..।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে কবি নির্মলেন্দু গুণের এই কবিতায়ই প্রথম হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের নাম দৃঢ়ভাবে উচ্চারিত হয় এবং এই নিষ্ঠুর ও নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানানোর জন্য কবিতা পাঠের কিছুক্ষণের মধ্যেই কবিকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। সেই কবিতা পাঠের আসরে সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত উপস্থিত ছিলেন। তিনি এ সম্পর্কিত একটি স্মৃতিচারণে লিখে গেছেন-‘তিনি যখন কবিতা আবৃত্তি শুরু করলেন তখন পিন পতনের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী একবার মাথা উঁচু করে, সেই যে নিচু করলেন আর জাগালেন না..সভাশেষে কবি নির্মলেন্দু গুণকে গ্রেফতার করা হয়।’