‘ওই নাম যেন বিসুভিয়াসের অগ্নি-উগারী বান’মোস্তাক হোসেন : ‘মুজিবুর রহমান! ওই নাম যেন বিসুভিয়াসের অগ্নি-উগারী বান। / বঙ্গদেশের এ প্রান্ত হয়ে সকল প্রান্ত ছেয়ে/ জ্বালায় জ্বালিছে মহাকালানল/ ঝঞ্ঝা অশনি বেয়ে..’
১৯৭৫-এর জুলাই মাসের শেষ দিকে বিটিভিতে ‘বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের এই দীর্ঘ কবিতাটি পাঠ করেছিলেন পল্লীকবি জসীমউদ্দীন নিজে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের শৌর্য- বীরত্ব গাঁথা তুলে ধরে পল্লীকবি জসিমউদ্দীনের লেখা এই কবিতাটি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও দীর্ঘ একটি কবিতা-যা কবি লিখেছিলেন বাঙালির মহান বিজয় অর্জনের পর পরই। কবি জসীমউদ্দীনের স্বকণ্ঠে এই কবিতা সেদিন মুগ্ধ করে সে সময়ের একমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভির অগণিত দর্শক-শ্রোতাদের । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহানুভবতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করে কবি তার এই দীর্ঘ কবিতায় লিখেছিলেন-‘মুজিবর রহমান! তব অশ্বেরে মোদের রক্তে করায়েছি পুতস্নান/ পীড়িত জনের নিশ্বাসঃ তাঁরে দিয়েছে চলার গতি/ বুলেটে নিহত শহীদেরা তার অঙ্গে দিয়েছে জ্যোতি।’
১৯৭৫-এর জুলাই ও আগস্ট মাসে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সমস্ত কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাকশাল ব্যবস্থায় ঘুণে ধরা ও পুরোনো সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়ে দেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের মুক্তি এবং কল্যাণের জন্য শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটানো। রাজধানী ঢাকায় চলছিল তখন বাকশাল ব্যবস্থায় জেলা গভর্নরদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। ’৭৫-এর ১৬ আগস্ট জেলা গভর্নরদের সমাপনী কর্মসূচিতে ভাষণ দেয়ার কথা ছিল রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। এরপর সেদিন থেকেই জেলা গভর্নরদের নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলায় গিয়ে দায়িত্ব গ্রহণের কথা ছিল। ’৭৫-এর ৩ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রধান হোতা খন্দকার মোশতাক আহমেদ তার আগামসীহ লেনস্থ বাসায় কর্নেল রশীদের সঙ্গে এক গোপন বৈঠকে তাই ১৬ আগস্টের আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার নিষ্ঠুর ও নির্মম পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে।