রশিদুন্ নবী
বাঙালি জাতিকে মুক্তির আলো দেখাতে, বাঙালির মনে স্বাধীনতার বীজ বপন করতে, জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে আপসহীন রণনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬)। তিনি তাঁর ‘কা-ারি হুঁঁশিয়ার’ কবিতায় বলেন : ‘কে আছো জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ/ এ তুফান ভারি, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।’ এই কবিতায় মুক্তির পতাকা ধারণ করতে নজরুল যে জোয়ানের আহ্বান করেন, যে দিশারির কামনা করেন, বাঙালির জীবনে সেই দিশারি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫)। বাংলার ঘুমন্ত মানুষকে জাগানোর উদ্দেশ্যে ‘বাঙালির বাঙলা’ প্রবন্ধে নজরুল আশাবাদ ব্যক্ত করেন ‘বাঙলা বাঙালির হোক। বাঙলার জয় হোক। বাঙালির জয় হোক।’ নজরুলের এই আশাবাদকে পরবর্তীকালে বাস্তবে রূপদানের ক্ষেত্রে প্রধান কা-ারি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। যে বাংলার স্বপ্নের রূপ নজরুল তাঁর কাব্য, সংগীত, প্রবন্ধ প্রভৃতিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু সেই স্বাধীন বাংলায় নজরুলের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি মনে করেন। ১৯৭২ সালে সদ্য প্রতিষ্ঠিত দেশকে সাজাতে বঙ্গবন্ধু দেশের দায়িত্ব পাওয়ার পর যে বিষয়গুলো সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন তার মধ্যে নজরুল-প্রসঙ্গকেও তিনি গুরুত্ব দেন। তাই ছয় মাসের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক চেষ্টায় যেমন নজরুলের ‘চল্ চল্ চল্’ গানটিকে রণসংগীতের মর্যাদা দেওয়া হয়, ১৯৭২ সালে তেমনি তাঁকেও পুনর্বাসন করা হয় এই স্বাধীন বাংলাদেশে। ঢাকাস্থ নজরুল একাডেমির আয়োজনে স্বাধীন দেশে প্রথম নজরুল-জয়ন্তীর অনুষ্ঠান উপলক্ষে নজরুল একাডেমি প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু তাঁর বাণীতে উল্লেখ করেন, ‘নজরুল বাংলার বিদ্রোহী আত্মা ও বাঙালির স্বাধীন ঐতিহাসিক সত্তার রূপকার।’
স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করতে ও পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করতে বাঙালিকে উদাত্ত আহ্বান জানান নজরুল। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণে বাঙালিকে মুক্তির ডাক দেন। তিনি বাঙালিকে মুক্ত করতে যে আহ্বান জানান তার বীজ নজরুল প্রোথিত করেন তার নানা রচনায়। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের যে মূল বিষয় তাতে নজরুলের রচনার যথেষ্ট প্রভাব লক্ষ করা যায়। এই প্রভাব কতটুকু তা সংক্ষেপে আলোচনা করা যেতে পারে।
নজরুল তার ‘বাঙালির বাঙলা’ প্রবন্ধটি শেষ করেন যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে তা হলো : ‘এই পবিত্র বাংলাদেশ বাঙালির-আমাদের।’ নজরুল আমাদের যে পবিত্র মাতৃভূমি চিনিয়ে দেন, সে মাটিকে, দেশকে নিজেদের করে পাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু যে ডাক দেন, সেই ডাকই ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু শাসন-শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক অমর কাব্য রচনা করেন রমনার রেসকোর্স ময়দানে। দেশের মানুষকে তাদের অধিকার আদায়ে একত্রিত করতে সমর্থ হন তিনি। ইংরেজ শাসন শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে সৃষ্ট পাকিস্তান যে বাঙালিকে আপন বাংলায় মাথা তুলে দাঁড়াতে দেবে না, স্বাধীনতার স্বাদ নিতে দেবে না, তা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেই চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হয় বাংলার মানুষ। বাঙালি সার্বিকভাবে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। সব ক্ষেত্রেই নিজেদের এ অপমান বাঙালিকে তাদের স্বাধীন দেশের প্রয়োজনকে উসকে দেয় আর তারা এটাও বুঝতে পারে যে ধর্মের জালে নয়, বাঙালি সংস্কৃতির টানেই মানুষ একাত্ম হতে পারে। এ উপলব্ধিকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাঙালিকে শোনান মুক্তির বার্তা। সেই মুক্তি বার্তার ভাবসম্পদ রয়েছে নজরুলের রচনায় নানাভাবে।
বঙ্গবন্ধু কেবল দেশের স্বাধীনতার ডাক দেননি, দিয়েছেন মুক্তির ডাক। মুক্তির আহ্বান ছিল সব ধরনের অনাচার ও অন্যের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শক্তি। অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে সমৃদ্ধি অর্জনে এ দেশের মাটির কোনো বিকল্প ছিল না। এর প্রমাণ মিলেছে স্বাধীনতা পরবর্তী এই ৪৭ বছরে। বাংলাদেশ এখন কৃষিতে সচ্ছল, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভে সমর্থ হয়েছে। এ দেশের ভূমি, শ্রম, শিল্প প্রভৃতি ব্যবহার করেও যে অসম নীতি পালন করছিল তৎকালীন পাকিস্তানের নীতি-নির্ধারক শ্রেণি, বাস্তবসঙ্গত কারণেই বাঙালি তা মানতে পারেনি বলেই বাঙালির মুখপাত্র বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন এই অসম ব্যবস্থা থেকে মুক্তি। জনগণের পূর্ণ সমর্থন থাকা সত্ত্বেও বাঙালিকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরিতে সুযোগ না দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক সত্তাতে আঘাত করা বাঙালি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তাই বাঙালির প্রাণের কথাই বঙ্গবন্ধু দৃঢ় প্রত্যয়ে তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণে শুনিয়ে দিলেন বিশ্বের সম্মুখে। বাঙালি সার্বিকভাবে মুক্তি চায়। বঙ্গবন্ধু এই মুক্তির পথের সহযাত্রী করে নেন লক্ষ-কোটি বাঙালিকে।
নজরুল আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন জাতি-ধর্ম ভেদাভেদের বিরুদ্ধে। নিজের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে তার সব কর্মেই তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন অসাম্প্রদায়িক চেতনা। কবিতা, গান, প্রবন্ধ প্রভৃতি সব মাধ্যমেই এ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে নজরুল ছড়িয়ে দেন। তাই তো তিনি উচ্চারণ করেন : ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম/ হিন্দু-মুসলমান/ মুসলিম তার নয়ন-মণি/ হিন্দু তাহার প্রাণ।’ একই মায়ের দুই সন্তান হিন্দু মুসলমানের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে শক্তিশালী করার জন্য সোচ্চার ছিলেন নজরুল। এই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের ডাক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বঙ্গবন্ধুর ভাষণেও লক্ষণীয়। বঙ্গবন্ধু বলেন : ‘বাঙ্গালি-অবাঙ্গালি, হিন্দু-মুসলমান সবাই আমাদের ভাই, তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের।’ ধর্মের চেতনায় অসাম্প্রদায়িকতাই শুধু নয়, বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে জাতিগত ক্লেশও ভুলে যেতে আহ্বান করেন। আজীবন তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি সমগ্র বাঙালির মুক্তির জন্য কাজ করে গেছেন। পাকিস্তান ও ভারত দুটি রাষ্ট্র্র জন্ম নেওয়ার পরও দুটি ভূখ-েই হিন্দু-মুসলমান ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে সম্প্রীতি বজায় রেখে জীবনযাপন করবে, সে আশাবাদ বঙ্গবন্ধু বরাবরই পোষণ করতেন, যা নজরুল-চেতনাতেও অত্যন্ত স্পষ্ট।
বঙ্গবন্ধু বাংলার বন্ধু, বাঙালির বন্ধু। বাঙালি জাতি তাদের মস্তকে বঙ্গবন্ধু নামক তিলক ধারণ করে বঙ্গবন্ধুকে নেতা নির্বাচন করেছে। বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে আস্থার সিংহাসনে রেখেছে বলেই তাঁর এক কথায় জাতি মৃত্যুকে তুচ্ছ মনে করে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারপরও বঙ্গবন্ধুর চাওয়া ছিল- সর্বক্ষেত্রে বাঙালির জীবনে সুখ নিয়ে আসা, বিশ্বের দরবারে বাঙালিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেখা। তাই তিনি নির্দ্বিধায় ৭ই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন : ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই।’ অনুরূপভাবে নজরুলও তার শেষ ভাষণে বলেছিলেন : ‘বিশ্বাস করো, আমি কবি হতে আসিনি।’ তবুও নজরুল হয়েছিলেন বাঙালির প্রাণের কবি। বঙ্গবন্ধুও বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ নেতায় পরিণত হয়েছিলেন।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর ও যশোরের রাজপথে বাঙালির রক্তের দাগ নিয়ে বঙ্গবন্ধু জনতার সামনে হাজির হন দুঃখভরা মন নিয়ে। ভাইয়ের মৃত্যু তিনি স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। সেই রক্তের বদলে বাঙালির মুক্তির গান গাইতেই তিনি নামেন মাঠে। তিনি বুঝতে পারেন এই রক্ত মোচন একমাত্র স্বাধীনতা দ্বারাই সম্ভব, যা নজরুলও উপলব্ধি করেছিলেন। বাঙালির স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনের সম্ভাব্য সব পথ সম্পর্কেও তার ভাষণে তিনি আলোকপাত করেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন : ‘এ দেশের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ থাকবে।’ নজরুল বাঙালিকে সেই আঘাতের মন্ত্রই শিখিয়েছেন। যারা দেশের সম্পদ লুটে খাচ্ছে তাদের আঘাতের জন্যই নজরুল বলেছেন : ‘পরের মুলুক লুট ক’রে খায়, ডাকাত তারা ডাকাত!/ তাই তাদের তরে বরাদ্দ ভাই আঘাত শুধু আঘাত।’
বঙ্গবন্ধু এই আঘাত হানার নানা কৌশল প্রয়োগের নির্দেশনা দেন মার্চের ভাষণে। তিনি জনতাকে আশ্বস্ত করে বলেন : ‘আন্দোলন কীভাবে করতে হয় আমি জানি।’ তিনি বাঙালিকে আঘাত হানার জন্যই প্রস্তুত হতে বলেন। বঙ্গবন্ধু জনতাকে নির্যাতনের মোকাবিলা করতে বলেন, শত্রুর অস্ত্রকে প্রতিহত করতে বলেন। তিনি বলেন : ‘যদি আর একটিও গুলি চলে তাহলে বাংলার ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর।’ পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নজরুল বাঙালির অন্তরকে প্রস্তুত করেছিলেন অনেক আগে থেকেই। ‘মোরা সবাই স্বাধীন মোরা সবাই রাজা’ প্রবন্ধে তিনি বলেন : ‘ছুটাও অশ্ব, চালাও রথ, হানো অগ্নিরূপ, বাজাও দামামা-দুন্দভি।... বল কারুর অধীনতা মানি না, স্বদেশিরও না বিদেশিরও না।’ এ বাণীটি অন্তরে ধারণ করতে পেরেছিল বাঙালি। তাই সেই ২৩ বছরের মৃত্যুর ইতিহাস, রক্তের ইতিহাস ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে লক্ষ প্রাণ একই পথে প্রবল শক্তিতে হাঁটতে পেরেছিল। নজরুল আহ্বান করেছিলেন : ‘ডাক ওরে ডাক মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে।’ বাঙালি এই মৃত্যুর আলিঙ্গনের মধ্য দিয়েই জীবনের সঞ্চার করেছিল। তাই মৃত্যু-মুক্তি-স্বাধীনতা বাঙালির চিন্তায় স্বাভাবিক শব্দ প্রবাহে ছুটে চলছিল জীবনের জয়গান গাওয়ার জন্য। বঙ্গবন্ধু সেই স্লোগান দিয়েছিলেন তাঁর ভাষণে। তিনি বলেছিলেন : ‘বাঙ্গালি মরতে শিখেছে, তাদের কেউ দাবাতে পারবে না।’
নজরুল কবি, তিনি তার কাব্যে জাগিয়েছেন মানুষকে। তার লেখনীর মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বাঙালির মনকে করে তুলেছেন মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে। যুদ্ধের জন্য লাখ লাখ সৈনিক সৃষ্টি করেছেন সৈনিক কবি নজরুল। আর রাজনীতির কবি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি তাঁর জীবন দিয়ে মানুষের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। নজরুলের শ্রেষ্ঠ কবিতা ‘বিদ্্েরাহী’। নির্দ্বিধায় বলা যায়, এমন একটি কবিতাই পারে কবিকে সুউচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করতে। ১৯২২ সালে কবিতাটি প্রকাশ হওয়ার পরই ভারতবর্ষে সৃষ্টি হয়েছিল নজরুল দ্যোতনার। নজরুলের দ্রোহের যে শক্তিশালী প্রকাশ এই কবিতায় দেখা যায় তা সাহিত্যের পাতা থেকে শুরু করে রণাঙ্গন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। আবার রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধুও তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতা পাঠ করলেন লক্ষ-কোটি জনতার সামনে ৭ই মার্চে। মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত যে লড়াইয়ের ডাক তিনি দিয়েছিলেন তা হলো : ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ আর নজরুল তার ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় বলেছিলেন : ‘যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,/ অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-/ বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত/ আমি সেই দিন হব শান্ত।’
বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের শেষাংশে বলেন ‘জয় বাংলা’। অন্যদিকে নজরুল ‘বাঙালির বাঙলা’ প্রবন্ধের শেষাংশে বলেন : ‘বাঙলার জয় হোক।’ এ ছাড়াও আমরা ‘জয় বাংলা’ কথাটি নজরুলের ‘পূর্ণ-অভিনন্দন’ কবিতায়ও দেখতে পাই এভাবে : জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি-অন্তরীণ!’ নজরুল সারা জীবন বাঙালির, বাঙালির ভাষার এবং দেশের জয় কামনা করে এসেছেন আর সেই জয়বাণী দিয়েই বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণ সমাপ্ত করেন।
নজরুল তার রচনার দ্বারা মানুষকে জাগাতে গিয়ে কারাবরণও করেছেন। বঙ্গবন্ধুও তাঁর মাতৃভূমির মুক্তির জন্য রাজনীতি করে গেছেন আজীবন, আর এজন্য তাঁকে বারবার যেতে হয়েছে কারাগারে। ‘শিকল পরেই শিকল’ বিকল করার অদম্য প্রয়াস দুজনের মধ্যেই লক্ষ করা যায়। তাই তো স্বাধীন বাংলার প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সভায় বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে নিয়ে আসেন ও স্বাধীন দেশে স্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করেন।
জাতীয় সংগ্রাম ও সংকটে বাঙালি শক্তি পেয়েছে নজরুল-রচনা থেকে। অন্যায়ের কাছে, পরাধীনতার কাছে মাথানত না করে বাঙালিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মন্ত্রণা দিয়েছেন নজরুল। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু ছিলেন নজরুলের শিকল ভাঙার হাতিয়ার স্বরূপ। এ দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। সব অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সর্বদা তিনি রুখে দাঁড়িয়েছেন প্রকৃত বীরের মতো। কখনো আপস করেননি তিনি। তাই বাংলা-বাঙালি-নজরুল-বঙ্গবন্ধু একই স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। বাঙালি যতদিন বাংলার আলো, বাতাস, মা ও মাটির ঐশ্বর্যে লালিত হবে, নজরুল ও বঙ্গবন্ধুকে তাঁদের মনের মণিকোঠায় স্থান দেবে পরম মমতায়, নির্লোভ ভালোবাসায়। এ দেশের মানুষ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে শিখবে নজরুল ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সামনে নিয়েই।