মুহম্মদ নূরুল হুদা
চল্লিশ বছর যায়, তোমাকে স্মরণ করে তোমার বাঙালি;
চল্লিশ হাজার যাবে, তোমার শরণ নেবে তোমার বাঙালি।
সতত বহতা তুমি জন্মে-জন্মে বাঙালির শিরায় শিরায়
সতত তোমার পলি হিমাদ্রি শিখর থেকে বীর্যের ব্রীড়ায়
দরিয়ায় দ্বীপ হয়ে যায়, যে-দরিয়া বাংলার সীমানা বাড়ায়,
যে-দরিয়া তোমার তরঙ্গ হয়ে কাল থেকে কালান্তরে যায় :
আজন্ম বাঙালি তুমি, আমৃত্যু বাঙালি,
তুমি নিত্য-বিবর্তিত এই লালসবুজের জাতিস্মর মায়ায়-ছায়ায়।
সেই কবে নেমেছিলে মধুমতী-তীরে, অনন্তর শৈশবের ঘুরন্ত লাটিম
গঙ্গা-পদ্মা আর জাতিমা-র সুখী-দুখী নীড়ে; সীমা নয়, চিনেছো অসীম;
যৌবনে গিয়েছো চলে পল্লীমা-র কোল ছেড়ে দেশমা-র সব আঙিনায়,
তোমার পায়ের চিহ্ন এ বাংলার ঘরে-ঘরে,
সব ধর্ম-বর্ণ-গন্ধ, বাঙালির সব মোহনায়।
না, তুমি আর শরীরী মানুষ নও সব ক্ষণ-জীবিতের মতো;
না, তুমি আর অশরীরী ছায়া নও মৃত্যুময় মৌনতার মতো।
তুমি নিত্য প্রমুক্ত চিত্ততা, তুমি নিত্য স্বাধীনতা, শুদ্ধ মানবতা;
ব্যক্তি তুমি, জাতি তুমি,
তামাটে জাতির বুকে মানুষের অভ্র-অমরতা।
তোমার শরীর এক মাটি-বীজ, শস্য তার বেড়ে যায় জ্যামিতিক হারে;
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ-মাইলের সীমানায় তোমার দেহের মাপ নেই শুধু আঁকা;
তোমার অনিদ্র আত্মা অনঙ্গ উড়াল-সেতু মহাজীবনের এপারে-ওপারে,
বিশ্ববাঙালির হাতে দেশে-দেশে কালে-কালে
তুমি সার্বভৌম বাঙালি পতাকা।
ঘাতকেরা আত্মঘাতী, সময়ের রায়ে তারা নিশ্চিতই নির্বংশ সবাই,
নির্বীর্যের দেশে গত, তারা তো করে না আর বংশের বড়াই ।
বাঙালি বীরের জাতি, তুমি সেই চিরঞ্জীব মানবিক শিখা,
কালের কপোল-তলে তোমার পতাকা আঁকে বাঙালির চির জয়টীকা।
শিশু তুমি, প্রজন্মের ঘরে-ঘরে আগত-ও-অনাগত শিশু,
যিশু তুমি, তোমার শোণিত-¯্রােতে পাপমুক্ত সন্তানেরা, হে বাঙালি যিশু।
তোমার নিষ্পাপ চোখে প্রজাপতি, শাদা পাল, বিলঝিল, নদী,
হ্রদ-পথ-জনপদ ঘুরন্ত ঘুঙুর হয়ে বেজে চলে কাল-নিরবধি;
শিশু তুমি যিশু তুমি, তুমি পিতা, বাঙালির জাতিপিতা
মানবধর্মের শিখা, আদিহীন অন্তহীন ভবিষ্য অবধি।
বাঙালি তোমাকে চায়, তুমি চাও বাঙালির ভালো :
বাঙালি মানুষ হয় বুকে যদি মুজিবের আলো।