সৈয়দ শামসুল হক
আজ এই আলো ফোটা ভোরের আকাশে
রক্তলাল মেঘমালা নিরন্তর বিন্যাসে বিন্যাসে
মুখ এঁকে চলেছে পিতার। আজও তো শ্রাবণ।
করাল শ্রাবণ ছিলো শেষের সেদিন, —বৃষ্টি নয়, রক্তপাত ছিলো;
বৎসর বৎসর পরে ফের রক্ত চেয়েছিলো
স্বপ্নবাহু সন্তানের, ধোঁয়ায় আবিল হয়ে গিয়েছিলো এভেন্যু সেদিন;
রক্ত নয় করতলে বৃষ্টি ধরে উঠেছিলো দেশ তারপর—
মানবিক শস্যে তাই মাঠ ভরে আছে আজ দেখি।
কিন্তু এও তাকিয়ে দেখছি—
কৃষ্ণবাদুড়ের কাল পৃথিবীতে এসেছে আবার।
ন্যায় নিষ্ঠা সত্য ইতিহাস
সমস্তই অধোমুখে ঠেসে আজ ধরেছে সন্ত্রাস।
কর্কটে ক্ষয়িত হয়ে যাচ্ছে আজ যা কিছু অর্জন।
বাসি ও বিষণ্ন লেবু মানবের কেবলি পতন।
তেরোশত নদীধৌত সবুজের তুমি বাংলাদেশ,
তোমারই তো বন্দরে বসত গ্রামে
জনপদে ইতিহাস কত রক্তময়—
এখনো তো ভুলি নাই—
অন্ধকার, বত্রিশ, বুলেট, সিঁড়ি, রক্ত, লাশ;
এবং ভুলিনি এই আমরাই হাতুড়ি ও নেহাই পিটিয়ে
অন্ধকার ছিন্ন করে অগ্নির স্ফুলিঙ্গ আনি, বত্রিশে ঠিকানা রাখি
ইতিহাসপত্র প্রেরকের,
মৃত্যুকে বিচ্ছিন্ন করি বুলেটের থেকে,
লাশ কাঁধে নিয়ে চলি বাংলাদেশ তোমার গভীরে লীন
মুক্তি আর স্বাধীনতা
অভিমুখে পুনরায়—
যদিও শৃঙ্খল আর সন্ত্রাসে মানুষ পৃথিবীর সর্বত্র পড়ছে,
দ্যাখো এই বাংলাদেশে, স্বপ্নবান তুমি আর কবিতার আমি
আজ এই শ্রাবণের অন্তিম দিনের ভোরে
ইতিহাসের গা থেকে মরচের দাগ ঘষে ঘষে
উজ্জ্বলতা এনেছি আবার।
বৃষ্টির বাতাস দিচ্ছে, জেগে উঠছে
সন্ত্রাসের বিপরীতে স্বপ্নময় এ দেশ আমার।।