মিল্টন বিশ্বাস
বাংলাদেশের কবিতায় অভিব্যক্ত হয়েছে মহিমান্বিত ও মুক্তিদাতা বঙ্গবন্ধু। সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের নিষ্ঠুরতা ও নির্যাতন থেকে মুক্ত করেন। স্বাধীন দেশ তারই অমরকীর্তি। জাতির জনক বাংলার মানুষকে সাহসী করে তুলেছিলেন। নিজেদের অধিকার আদায় করে নেওয়ার জন্য পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৪৮ থেকে ধীরে ধীরে তার বিকাশ, একাধিকবার তিনি বন্দিত্ববরণ করেছেন; নির্যাতন-নিপীড়ন চলেছে তাঁর ওপর। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনার পর বঙ্গবন্ধুর মহিমাকে ভাস্বর ও দ্যুতিময় করেছেন একাধিক কবি।
বঙ্গবন্ধুর নাম প্রথম উচ্চারিত হয় নির্মলেন্দু গুণের কবিতায়। তাঁর একাধিক কবিতা কিংবা বলা চলে সবচেয়ে বেশি কবিতায় বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ উচ্চারিত হয়েছে। কবির ‘মুজিবমঙ্গল’ কাব্যে সংকলিত উল্লেখযোগ্য কবিতা হলো- ‘প্রচ্ছদের জন্য : শেখ মুজিবুর রহমানকে’, ‘সুবর্ণ গোলাপের জন্য’, ‘হুলিয়া’, ‘শেখ মুজিব ১৯৭১’, ‘সেই খুনের গল্প ১৯৭৫’, ‘ভয় নেই’, ‘রাজদণ্ড’, ‘নেড়ী কুত্তার দেশে’, ‘আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি’, ‘মুজিব মানে মুক্তি’, ‘শেষ দেখা’, ‘সেই রাত্রির কল্পকাহিনী’, ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’, ‘শোকগাথা : ১৬ আগস্ট ১৯৭৫’, ‘পুনশ্চঃ মুজিবকথা’, ‘আগস্ট শোকের মাস, কাঁদো’, ‘প্রত্যাবর্তনের আনন্দ’ প্রভৃতি।
১
মুজিবকে বিবেচনায় নিয়ে ১৯৬৭ সালের ১২ নভেম্বর প্রথম তিনি কবিতা লেখেন ‘প্রচ্ছদের জন্য’(পরে এটি ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ কাব্যগ্রন্থে ‘স্বদেশের মুখ শেফালি পাতায়’ নামে অন্তর্ভুক্ত); তখন শেখ মুজিব কারাবন্দি। ১৯৬৯ সালে রচিত ‘হুলিয়া’ কবিতায় নির্মলেন্দু গুণ তাঁকে নায়কের আসন দান করেন। যাঁকে কেন্দ্র করে বাংলার স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষা আবর্তিত হচ্ছিল তখন। মূলত ১৯৬৭-৬৮ সালে গণ-আন্দোলন যখন সামান্য ভাটা পড়েছে, রাজনৈতিক মহলে বঙ্গবন্ধুর একলা চলার নীতি নিয়ে যখন নানা রকম দোলাচল ও বিভ্রান্তি, ঠিক সেই সময় ‘হুলিয়া’ কবিতা তিনি লেখেন। এ ছাড়া সুফিয়া কামালের ‘ডাকিছে তোমারে’, সানাউল হকের ‘লোকান্তর তিনি আত্মদানে, আবুল হোসেনের ‘শিকারের কবিতা’, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর ‘কোন ছবিগুলি’, শামসুর রাহমানের ‘যাঁর মাথায় ইতিহাসের জ্যোতির্বলয়’, হাসান হাফিজুর রহমানের ‘বীর নেই আছে শহীদ’, কায়সুল হকের ‘সমষ্টির স্বপ্নের নির্মাতা’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘পিতা তোমার কথা এখন এখানে আর’, দিলওয়ারের ‘বিতর্কিত এই গ্রহে’, বেলাল চৌধুরীর ‘রক্তমাখা চরমপত্র’, মহাদেব সাহার ‘আমি কি বলতে পেরেছিলাম’, হেলাল হাফিজের ‘নাম ভূমিকায়’, শিহাব সরকারের ‘পিতা’, অসীম সাহার ‘প্রতিশোধ’, সিকদার আমিনুল হকের ‘আত্মজের প্রতি’, আসাদ চৌধুরীর ‘দিয়েছিলো অসীম আকাশ’, আবু কায়সারের ‘সূর্যের অনল’, শান্তিময় বিশ্বাসের ‘ঝড় আর মেঘের সমান’, আখতার হুসেনের ‘আজ থেকে তুই নিজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর’, মুহম্মদ নূরুল হুদার ‘যিসাস মুজিব’, রবীন্দ্র গোপের ‘আমার বুকে অর্ধনমিত পতাকা’, নাসির আহমেদের ‘গুলিবিদ্ধ বাংলাদেশ’, কামাল চৌধুরীর ‘এখনো দাঁড়িয়ে ভাই’, ত্রিদিব দস্তিদারের ‘বাঙালির ডাক নাম’, মিনার মনসুরের ‘কেউ কি এমন করে চলে যায়’ প্রভৃতি কবিতা থেকে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা যায়। কেন তিনি জাতির জনক, কেন তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি সেই প্রসঙ্গও কবিরা তুলে ধরেছেন। আমিনুর রহমান সুলতানের ‘বাংলাদেশের জনক তুমি’ এবং শামীম রেজার ‘ভূর্জপাতায় লিখি নাম তার’ এ ধারারই কবিতা। আবিদ আনোয়ার ‘প্রতিরোধ’ কবিতায় ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানিদের গণহত্যা ও বঙ্গবন্ধুকে জেলে বন্দি করার ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তবে কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় দিয়েছেন কবি আমিনুল ইসলাম।
২
আমিনুল ইসলাম (জন্ম ২৯ ডিসেম্বর ১৯৬৩) দীর্ঘদিন যাবৎ কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ ও সংগীতবিষয়ক নিবন্ধ লিখছেন। তবে তিনি প্রধানত কবি হিসেবে বেশি পরিচিত। ‘প্রণয়ী নদীর কাছে’ তাঁর গত বছর (২০১৬) প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। তবে ২০০২ সাল থেকে নিয়মিত কবিতার বই প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর। ‘তন্ত্র থেকে দূরে’(২০০২), ‘মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম’ (২০০৪), ‘শেষ হেমন্তের জোছনা’ (২০০৮), ‘কুয়াশার বর্ণমালা’(২০০৯), ‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি’ (২০১০), ‘স্বপ্নের হালখাতা’ (২০১১), ‘প্রেমসমগ্র’ (২০১১), ‘জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার’ (২০১২), ‘শরতের ট্রেন শ্রাবণের লাগেজ’ (২০১৩), ‘কবিতাসমগ্র’ (২০১৩), ‘জোছনার রাত বেদনার বেহালা’ (২০১৪), ‘আমার ভালোবাসা তোমার সেভিংস অ্যাকাউন্ট’(২০১৫)। কাব্যের বিচিত্র সুর, সংগীত ও ব্যঞ্জনার পরিসরের বাইরেও আমিনুল ইসলামের ছড়াগ্রন্থ ‘দাদুর বাড়ি’ (২০০৮), ‘ফাগুন এলো শহরে’ (২০১২), ‘রেলের গাড়ি লিচুর দেশ’ (২০১৫) এবং প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বিশ্বায়ন বাংলা কবিতা ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০১০) তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রচনা। সরকারি চাকরিজীবী হলেও আমিনুল ইসলামের একমাত্র টার্গেট কবিতা। তিনি আত্মনিয়োগ করেছেন সাহিত্যচর্চায় এবং নিজের স্বাতন্ত্র্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছেন।
আমিনুল ইসলামের একাধিক কবিতায় বঙ্গবন্ধু উদ্ভাসিত হয়েছেন। তবে তাঁর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কবিতায় জাতির পিতা সমুজ্জ্বল। নব্বইয়ের পর বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচার নিয়ে যখন বিচারকদের বিব্রতকরণ ও শেখ হাসিনা, শেখ রেহানার জীবন হুমকির সম্মুখীন তখনো তিনি পীড়িত হয়েছেন। বিশেষত সেই সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নীরব ভূমিকা দেখে মর্মাহত হন তিনি। ‘আমার মুক্তিযোদ্ধা হতে পারা না পারার গল্প’(জলচিঠি নীল স্বপ্নের দুয়ার) কবিতায় ৭ মার্চের ভাষণের প্রসঙ্গ আছে, দেখেছেন মেঘের মিনার ছোঁয়া আঙুলের ইশারা। ‘উত্তরের একাত্তর’ কবিতায় তির্যকভাবে উপস্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার নিয়ে ষড়যন্ত্র ও বিচারকদের ভূমিকার নেতিবাচকতা।
অবশ্য কবির কাছে ৭ মার্চের ভাষণ সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয়। তিনি বঙ্গবন্ধু ও কবি কাজী নজরুল ইসলামের তুলনামূলক আলোচনা করেছেন। দেখিয়েছেন নজরুল যেমন ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা ১৯২২ সালে দাবি করেছিলেন, তেমনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কণ্ঠে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ডাক এসেছিল। আমিনুল ইসলামের কাছে বিদ্রোহী নজরুলের রাজনৈতিক সংস্করণ হলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের অগ্নিঝরা ভাষণ সেই বিদ্রোহী কবিতারই আরেক রূপ। ‘জয় বাংলা’ শব্দটিও বঙ্গবন্ধু নজরুল থেকে পেয়েছিলেন। আমিনুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতায় লিখেছেন ‘আঙুল ছুঁয়েছে আকাশ।’(প্রণয়ী নদীর কাছে) এ কবিতায় রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অবাধ সাংস্কৃতিক বিকাশ এবং সর্বশ্রেণির মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা আছে।
বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রাম নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য কবি আমিনুল ইসলাম লিখেছেন ‘তর্জনী’।
জনে জনে প্রাণের সাগর রেসকোর্সের ঐ মাঠ!
সেই সাগরে মিললো নদী-মিললো পথ ও ঘাট।
আশেপাশের মিছিলগুলোয় উপচে-পড়া ভীড়
যোগ দিয়েছে সেই মিছিলে ফিঙ্গে ফেলে নীড়!
বজ্রধ্বনির ঢেউয়ে ভাঙে ভীড়-সাগরের পাড়
ঢেউয়ের টুঁটি ধরবে টিপে সাধ্য এমন কার!
ঝড় দেখি না—তবুও ওঠে উথালপাথাল ঢেউ
ঝড় ওঠেনি— ঝড়ের চেয়েও শক্তিশালী কেউ!
তর্জনীটার ডগায় দ্যাখো তেলেসমাতির বাও
তার দোলাতে দোলে সাগর— তার নাচনে নাও।
চুড়োয় যখন প্রাণের জোয়ার উদ্বেলিত কান
ওই আঙুলটা শুনিয়ে দিলো স্বাধীনতার গান। (তর্জনী/ অগ্রন্থিত)
তাঁর মতে, নজরুলের স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ১৯৭৫-এ ঘাতকরাই রাষ্ট্রক্ষমতা লাভ করে নানাভাবে পুরস্কৃত হয়। এসব নিয়ে ‘কল্পচিত্র’(কুয়াশায় বর্ণমালা) এবং ‘এই দৃশ্য আর দেখতে চাই না’(স্বপ্নের হালখাতা) শীর্ষক প্রতীকী কবিতা লিখিত। স্বাধীনতার ঘোষণা ও বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘যেভাবে শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ’ নামের কিশোর কবিতা। জাতির পিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য হিসেবে প্রতীকায়িত হয়েছেন তাঁর কবিতায়। স্বাধীনতার ঘোষক কে এ নিয়ে কবিতা লিখেছেন ‘চাঁদ সুরুজের দেশে’। (পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি) বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার সূর্য। অন্যরা চাঁদের মতো। ঘোষক নিয়ে বিতর্ক অর্থহীন, মূল্যহীন। ভাষার চাবুক দিয়ে তিনি সেই অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় মাতামাতিকে কশাঘাত করেছেন।
জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে মহিমান্বিত করেছেন আমিনুল ইসলাম। একটি স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র গঠনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুর। বাঙালিকে একটি স্বাধীন জাতিতে উন্নীতকরণ এবং তাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দেওয়ার কৃতিত্ব শেখ মুজিবুর রহমানের। তিনি অতুলনীয়। এটা যারা স্বীকার করে না তাদের অকৃতজ্ঞতার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন কবি- ‘অকৃতজ্ঞ হওয়া’ (মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম) কবিতায়। আগেই বলেছি, জাতীয় কবি নজরুলের জীবন ও কর্মকাণ্ডের মিল পেয়েছেন কবি বঙ্গবন্ধুর চেতনায়। নজরুলের বাঙালির মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন বঙ্গবন্ধু। নজরুলের মতোই বিরাট হৃদয়ের মানুষ ছিলেন তিনি। মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেন দুজনই। অসাম্প্রদায়িক চেতনার অন্যতম পুরোধাও ছিলেন তিনি। দুই মহান মানবকে একাকার করে লিখেছেন ‘কথা বলে ওঠে জাতীয় কবির মাজার’ (জলচিঠি নীল স্বপ্নের দুয়ার) নামের কবিতা।
এই কবিতায় বাঙালির উদ্দেশ্যে কথা বলেছেন জাতীয় কবির মাজারের প্রতীকে জাতীয় কবি স্বয়ং। ‘আমি তো আপনাকে ছাড়া কাউকে কখনো কুর্নিশ করিনি; কিন্তু এই/নাও আমার মরণোত্তর সালাম— এটি পৌঁছে দিও সবুজের স্নেহমাখা/ টুঙ্গিপাড়ায়— যেখানে ঘুমিয়ে আছে আমার স্বপ্নের রূপকার শেখ মুজিব;/সে-ই আমার হৃদয়ের ডাকটা ষোলআনা শুনতে পেয়েছিল; তোমরা/তাকে ভালোমতো বোঝোনি— যেমন বোঝোনি আমাকে। বাংলা বাঙালির হয়েছে— দেখে খুউব খুশি হয়েছি— যদিও বিভাজনে আমার সায় ছিল না।’ (কথা বলে ওঠে জাতীয় কবির মাজার)
৩
মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু একীভূত আমিনুল ইসলামের কবিতায়। মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য কেবল নয় তিনি নিজে দেশের ইতিহাস বিকৃতিকারীদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়েছেন। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাসের যথার্থ রাস্তায় তুলে এনেছেন কবিতার মাধ্যমে। আমিনুল ইসলামের কবিতায় প্রতীক, চিত্রকল্প বৈচিত্র্যময় ও রহস্যখচিত। তিনি প্রতীক নির্মাণ করেছেন, ইতিহাস থেকে, পূর্বসূরি কবিদের প্রকাশভঙ্গির সূত্র ধরে- কখনো প্রাণিবাচক বিশেষ্য শব্দ দিয়ে, বৃক্ষের নামবাচক শব্দ দিয়ে, বিশেষণ দিয়ে এবং কখনো কখনো রঙের ব্যবহারের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত কবিতায় তারই সাক্ষ্য রয়েছে।