বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম তদন্ত


পার্থ শঙ্কর সাহা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবার ও জাতীয় চার নেতা হত্যার ঘটনায় প্রথম অনুসন্ধান কমিশন গঠিত হয় যুক্তরাজ্যে, ১৯৮০ সালে। বাংলাদেশে আইন করে বিচারের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী শন ম্যাকব্রাইডসহ চার ব্রিটিশ আইনবিদ মিলে এ কমিশন গঠন করেছিলেন। তবে অনুসন্ধানের কাজে এ কমিশনকে বাংলাদেশে ভিসা দেয়নি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকার।

আইনবিদ এবং এ হত্যাকাণ্ডের অনুসন্ধান ও তদন্তের কাজে বাংলাদেশে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার তদন্তে বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত প্রথম কমিশন ছিল এটি। এই ঘৃণ্য ঘটনাকে আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরতে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব যথেষ্ট। তাঁরা বলেছেন, এ কমিশনকে দেশে আসতে না দেওয়ার মধ্য দিয়ে এটি স্পষ্ট হয়েছিল যে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িতদের প্রতি সামরিক সরকারের সরাসরি সমর্থন ছিল। সরকার এর তদন্তকাজ বাধাগ্রস্ত করেছিল।

ওই অনুসন্ধান কমিশনের প্রতিবেদনটি শেখ মুজিব মার্ডার ইনকোয়ারি: প্রিলিমিনারি রিপোর্ট অব দ্য কমিশন অব ইনকোয়ারি শিরোনামে পুস্তিকা লন্ডনের র‍্যাডিক্যাল এশিয়া পাবলিকেশন্স থেকে ১৯৮২ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত হয়। এর মুখবন্ধ লিখেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেদিন তিনি লিখেছিলেন, ‘বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের সরকার একজন হত্যাকারীকেও বিচারের মুখোমুখি করেনি। বস্তুত এসব হত্যাকারী এবং তাদের সহযোগী ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারের কাছ থেকে সুরক্ষা এবং সহযোগিতা পেয়ে এসেছে। এদের কাউকে কাউকে বিদেশে কূটনৈতিক মিশনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যরা দেশেই নানা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। এভাবে অপরাধকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।’

প্রকাশিত পুস্তিকায় এ কমিটি গঠনের ইতিবৃত্ত থেকে শুরু করে অনুসন্ধান কমিশনের সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরা হয়। এ কমিশন গঠিত হয় ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। এর প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সের একটি কমিটির কক্ষে। ব্রিটিশ এমপি ও আইনবিদ স্যার টমাস উইলিয়ামসের নেতৃত্বে কমিশনে আরও ছিলেন আয়ারল্যান্ড সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী শন ম্যাকব্রাইড, ব্রিটিশ এমপি ও আইনবিদ জেফরি টমাস এবং ব্রিটিশ আইনবিদ, মানবাধিকারকর্মী ও পরিবেশবাদী আইনবিদ অবরি রোজ।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অনুসন্ধানে কমিশনের কাছে আবেদন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, জাতীয় চার নেতার অন্যতম সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনসুর আলীর ছেলে প্রয়াত মোহাম্মদ সেলিম এবং আরেক জাতীয় নেতা এবং সাবেক উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে ও বর্তমান জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এ হত্যাকাণ্ডের বিচারে পদে পদে বাধা আসে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। ওই বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। ১৯৯৮ সালে ঢাকার তৎকালীন দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। তবে ২০০০ সালে হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় দেন এবং পরের বছর হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে অন্য তিনজনকে খালাস দেন। কিন্তু পরবর্তী ছয় বছর মামলার শুনানি না হওয়ায় ওই রায় কার্যকর হয়নি।

শেখ মুজিব মার্ডার ইনকোয়ারি: প্রিলিমিনারি রিপোর্ট অব দ্য কমিশন অব ইনকোয়ারি পুস্তিকাটিতে যুক্তরাজ্যের অনুসন্ধান কমিশনের প্রথম বৈঠকের পর দেওয়া বিবৃতিটি সংযুক্ত আছে। কমিশনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার এবং জাতীয় চার নেতা হত্যার ঘটনার আইন ও বিচারের প্রক্রিয়া কেন সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তা অনুসন্ধান করা। কমিশন এ জন্য দেশে-বিদেশে প্রকাশিত নানা বিবৃতি-বক্তব্য, নথিসহ প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করে।
বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও জাতীয় চার নেতা হত্যার পর গঠিত প্রথম অনুসন্ধান কমিশনের সদস্য নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী শন ম্যাকব্রাইড (বাঁয়ে) এবং ব্রিটিশ এমপি স্যার টমাস উইলিয়ামসের সঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিবেদনের শেষ প্রচ্ছদ
বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও জাতীয় চার নেতা হত্যার পর গঠিত প্রথম অনুসন্ধান কমিশনের সদস্য নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী শন ম্যাকব্রাইড (বাঁয়ে) এবং ব্রিটিশ এমপি স্যার টমাস উইলিয়ামসের সঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিবেদনের শেষ প্রচ্ছদ
১৯৮১ সালের ১৩ জানুয়ারি কমিশনের সদস্য স্যার জেফরি টমাসের মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধানের জন্য এক সহযোগীকে নিয়ে ঢাকায় আসার কথা ছিল। এ জন্য কমিশনের সদস্যসচিব অবরি রোজ তাঁদের দুজনের জন্য লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভিসার আবেদন করেছিলেন। যেহেতু তাঁদের দুজনের ১৩ জানুয়ারি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের সন্ধ্যার ফ্লাইটে টিকিট কাটা ছিল, তাই ভিসার জন্য ওই দিন সকালে হাইকমিশনে আবার তাগাদা দেওয়া হয়। তখন বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে বলা হয়, তাঁদের পাসপোর্ট ও ভিসা বিকেলের মধ্যে ফেরত দেওয়া হবে। বিকেলে ফোন করলে হাইকমিশন থেকে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট শাখা বন্ধ হয়ে গেছে। পরে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে অনুসন্ধান কমিশনকে জানানো হয় যে ঢাকায় যাওয়ার ভিসা দেওয়া হবে না জেফরি টমাস ও তাঁর সহযোগীকে।

১৯৭৭ সালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশে পাঠানো কমিশনের প্রতিবেদনও আমলে নেয় এই অনুসন্ধান কমিশন। ওই বছরের এপ্রিলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মিশনটির নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে গঠিত এ কমিশনেরই সদস্য শন ম্যাকব্রাইড। তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিসহ সরকারের শীর্ষ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন। তবে তিনি মূলত জেলহত্যা নিয়ে কথা বলেন। তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ওই কমিশনকে জেলহত্যার আইনানুগ বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

যুক্তরাজ্যের অনুসন্ধান কমিশন সার্বিক বিবেচনার পর তিনটি সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। এক, এ হত্যাকাণ্ডের বিচারে আইন ও বিচারপ্রক্রিয়াকে যথাযথভাবে এগোতে দেওয়া হয়নি। দুই, বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে সরকারই দায়ী। তিন, হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রক্রিয়ার বাধাগুলো দূর করতে হবে এবং সেই সঙ্গে আইন ও বিচারের প্রক্রিয়াকে তার নিজ ধারায় অগ্রসর হতে দিতে হবে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান  বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এটিই ছিল প্রথম কমিশন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে এ ধরনের কমিশন গঠনের বিষয়টি স্বীকৃত। এ ধরনের কমিশনকে দেশে আসতে না দেওয়ার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় দেখা যায়। অনেক সময় অপরাধের বিচার চলমান থাকলে বিচারকাজে বিঘ্ন হওয়ার শঙ্কায় সরকার এমন কমিশনকে না-ও আসতে দিতে পারে। আবার অপরাধ যেন প্রকাশিত না হয় এবং বিচারের পথ রুদ্ধ করতে সরকার এমন কমিশনের কাজে বাধা দেয়। তাঁর মতে, বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনায় গঠিত এই কমিশনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিষয়টি ঘটেছে। এই ঘৃণ্য ঘটনার কুশীলবদের পক্ষ নিয়েছিলেন জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার।

 ১৩ সামরিক কর্মকর্তা শনাক্ত

বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যার ঘটনা অনুসন্ধানের পর এই কমিশন ১৩ সামরিক কর্মকর্তাকে শনাক্ত করে। তাঁদের নানাভাবে বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনে চাকরি দেয় ১৯৭৫ পরবর্তী সরকার।

কমিশন তিনটি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং তা পর্যালোচনা করে। সেগুলো হলো, বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার এবং জাতীয় চার নেতার হত্যাসংক্রান্ত কাগজপত্র; জনসমক্ষে এসব হত্যার দায় স্বীকার করে যেসব ব্যক্তি বক্তব্য দিয়েছিলেন, তাঁদের সংক্রান্ত এবং এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের গ্রহণ করা পদক্ষেপগুলো। মোট ২০টি অনুচ্ছেদে এ প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের মোট ২২ সদস্য নিহত হন। তাঁদের মধ্যে চার বছরের একটি মেয়ে ও তিন বছরের এক ছেলে ছিল। কয়েকজন অতিথি এবং এসব পরিবারের আত্মীয়েরাও ছিলেন। সেনাবাহিনীর একটি ছোট গ্রুপ এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এর নেতৃত্বে অবসরপ্রাপ্ত এবং চাকরিরত কর্মকর্তারা ছিলেন।

প্রতিবেদনে লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ এবং মেজর শরিফুল হক ডালিমকে সামরিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাঁদের মধ্যে ফারুক ও রশিদ ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংককে থাকার সময় কর্নেল ফারুক এক সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তাঁর পরিবার এবং জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। ১৯৭৬ সালের ৩০ মে লন্ডনের সানডে টাইমসে এবং ওই বছরের ২ আগস্ট লন্ডনে টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন ফারুক।

বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত আরও যেসব সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সময় কূটনৈতিক মিশনে চাকরি দেওয়া হয়, এর একটি তালিকা দেওয়া হয় প্রতিবেদনে। তাঁদের মধ্যে আছেন

 ১. লে. কর্নেল আজিজ পাশা ২. মেজর মুহিউদ্দিন আহমেদ ৩. মেজর শাহরিয়ার রশীদ খান ৪. মেজর বজলুল হুদা ৫. মেজর এ এম রাশেদ চৌধুরী ৬. মেজর এস এইচ এম বি নূর চৌধূরী ৭. মেজর শরিফুল হোসেন ৮. ক্যাপ্টেন কিশমত হোসেন ৯. লেফটেন্যান্ট এম খায়রুজ্জামান ১০. লেফটেন্যান্ট আব্দুল মাজেদ।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের কথা উল্লেখ করা হয় বইটিতে। এতে বলা হয়, জেলহত্যার বিষয়ে সরকার বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে ১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর। বিচারপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে ওই কমিশনের আরও সদস্য ছিলেন বিচারপতি কে এম সোবহান এবং বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন। ওই দিন লালবাগ থানায় মামলা হয়। পরে মামলাটি অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়। দীর্ঘ ছয় বছর কেটে গেলেও এ ঘটনায় জড়িতদের কাউকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। সরকার তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করতেও ব্যর্থ হয়। পুলিশও কোনো ভূমিকা নেয়নি।

১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তত্কালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন। নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় দেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। এরপর ১২ আসামির মধ্যে প্রথমে চারজন ও পরে এক আসামি আপিল করেন। কিন্তু এরপর ছয় বছর আপিল শুনানি না হওয়ায় আটকে যায় বিচারপ্রক্রিয়া। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আপিল বিভাগে একজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাটি আবার গতি পায়। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করেন। ফলে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে হাইকোর্টের দেওয়া ১২ খুনির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ ও মুহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি কার্যকর হয়। ওই রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা। পলাতক বাকি ছয়জন হলেন খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও মোসলেম উদ্দিন। এদের মধ্যে রশীদ জার্মানিতে, ডালিম স্পেনে, নূর চৌধুরী কানাডায় ও রাশেদ চৌধুরী এখন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। বাকি দুজনের অবস্থান এখনো অজানা। পলাতক আসামিদের সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

যুক্তরাজ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যায় গঠিত কমিশনের প্রতিবেদন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু হত্যার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দ  বলেন, ‘অনেক দিন আগের কথা। আমি সেই সময় পত্রিকায় এই কমিশনকে আসতে না দেওয়ার ঘটনা পড়েছি। এখন তা স্মরণ করতে পারছি।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার তদন্তের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উদ্যোগের একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে।

SUMMARY

107-1.jpg