আলমগীর হোসেন
‘খোকা বাবু জন্মগ্রহণ করলো বঙ্গদেশে, আত্মহারা বঙ্গমাতা উঠলো যেন হেসে। ধ্বনিত হলো মসজিদ মিনারে মুয়াজ্জিনের আযান, মায়ের কোলে খোকা বাবু করলো দুগ্ধ পান। আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হলো মুক্তির জয়গান, নাম রাখলো খোকা বাবুর শেখ মুজিবুর রহমান।’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে এভাবেই ছন্দ মিলিয়ে অর্থবহ ও তথ্যবহুল একটি মাত্র কবিতা তথা ‘মহাকাব্য’ রচনা করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের নি¤œপর্যায়ের একজন সদস্য। ২৪ হাজার ৩২০ লাইনের (পঙ্ক্তি) এ কবিতার বইয়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কাব্যধারায় বঙ্গবন্ধু’। এ অনন্য-অসাধারণ কাজটি যিনি সম্পন্ন করেছেন তিনি হলেন পুলিশ কনস্টেবল আবুবকর মোল্লা।
যদিও এ পুলিশ সদস্যের নামের আগে ডিসি, এসপি, ডিআইজি বা বড় কোনো পদবি নেই। তাতে কী? প্রতিভা, একাগ্রতা থাকলে কী না হয়। আবুবকর দেখিয়ে দিয়েছেন, সুনিদর্িৃষ্ট লক্ষ্য, ভালোবাসা-আন্তরিকতা ও চেষ্টা থাকলে সবই সম্ভব। একজন কনস্টেবলের এমন অনন্য সৃষ্টির ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশংসনীয় আলোচনা শুরু হয়েছে। গবেষণাধর্মী ও নানা ঘটনার সংমিশ্রণে লেখা এ কাব্যধারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম, পরিচিতি, রাজনীতি, মুক্তি-স্বাধীনতার আন্দোলনসহ জাতির জনকের ঐতিহাসিক প্রায় সব ঘটনায় অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
জানা গেছে, চলতি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ৬৬২ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে ৮৮৭ পৃষ্ঠার এ মহাকাব্যটি। এ কাব্যধারাটি প্রকাশিত হয়েছে মানবাধিকার প্রকাশনা থেকে। ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় বইমেলা প্রাঙ্গণের মোড়র উন্মোচন চত্বরে ‘কাব্যধারায় বঙ্গবন্ধু’ বইটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াসহ ঊর্ধ্বতন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আবুবকরের লেখা ‘কাব্যধারায় বঙ্গবন্ধু’ বইটি হাতে পেয়েছেন। তারা লাল-সবুজের মলাটের বড় আকারের বইটি নেড়েচেড়ে দেখার পাশাপাশি কিছু কিছু অংশ পড়েছেনও। তাতেই আবুবকের প্রশংসায় তারা পঞ্চমুখ। যদিও অনেক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা প্রতিবছরই গল্প, উপন্যাস, ছড়াসহ নানা ধরনের বই লিখেন এবং বইমেলায় প্রকাশ করে থাকেন; কিন্তু সরাসরি মাঠে শারীরিক-মানসিক পরিশ্রম করা একজন পুলিশ কনস্টেবলের জন্য এত বড় আকারের কাব্যগ্রন্থ রচনা করার বিষয়টি সত্যিই বিস্ময়কর বলেই মনে করছেন লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত থাকা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।
এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কবি আবুবকর মোল্লা আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমার আগ্রহ ও দুর্বলতা যখন বুঝতে শিখেছি প্রায় তখন থেকেই। বহুদিনের স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে ব্যতিক্রম এবং ভালো কিছু করার, যা অন্য কেউ করেনি। সেই আগ্রহ-চেষ্টার ফসল হিসেবেই ‘কাব্যধারায় বঙ্গবন্ধু’ শেষ পর্যন্ত সুসম্পন্ন করতে পেরেছি।’ আবুবকর মোল্লা আরও বলেন, বিগত ১১ বছর ধরে পুলিশি ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা পর্যায়ের তথ্য ও চিত্র সংগ্রহ করেছি। সেগুলোর ওপর আবার অনেকটা গবেষণাও চালিয়েছি। পাশাপাশি তখন থেকেই কয়েক লাইন করে পর্যায়ক্রমে তৈরি করেছি ‘কাব্যধারায় বঙ্গবন্ধু।’
দেখা গেছে কাব্যধারায় বঙ্গবন্ধু গ্রন্থটিতে ৮৮৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি কবিতা। এরপর আরও ২৪টি পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক নানা সময়ের বা ঘটনার ছবি রাখা হয়েছে। বইটির শুরুর দিকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে রয়েছে পুলিশের বেশকিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্ত্রী ফাতেমা বকরসহ অনেকের নাম। যাদের অনুপ্রেরণায় তিনি এ অসাধ্য সাধন করতে সক্ষম হয়েছেন।