দীপক চৌধুরী :
জাতির পিতার আচরণ দিয়ে মানুষকে হৃদয়ের কাছে টানার এক অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। এ কারণেই তিনি সকল শ্রেণির মানুষের কাছে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের শুধু ত্রাতাই ছিলেন না, তিনি এ উপমহাদেশের এক বিরল নেতা। তিনি স্নেœহ দিয়ে মানুষের মন জয় করতে পারতেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন সত্য হচ্ছে এখন বাংলাদেশে। তার মৃত্যুর চার দশক পর বাংলাদেশ আজ অদম্যÑ এটা এখন বিশ্বেই প্রমাণ হচ্ছে।
মহিতুল ইসলামের লেখা এবং অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধুর হাতের দলিল’ গ্রন্থ পাঠ করা হলে কিছু উপলব্ধি করা যায় বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে। এএসএম মহিতুল ইসলাম কিছু ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, তিনি নিজেকে এক মহান নেতার সন্তান হিসেবে মনে করতেন। এক বছর সাত মাস এ নেতার কাছ থেকে পিতা-মাতার স্নেহ ও ভালবাসা পেয়েছেন তিনি।
এ গ্রন্থে থেকে জানা যায়Ñ মহিতুল ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হিসেবে খুব কাছ থেকে তাদের দেখার বিরল সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে একদল বিপথগামী সৈন্য বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে হত্যা করে। তার সহকর্মী অফিসে যোগদান না করা পর্যন্ত তার ডিউটি ছিল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা। বঙ্গবন্ধুর গাড়ি দুপুরে করিডোরে এসে পৌঁছতো। বঙ্গবন্ধু তার নিরাপত্তা কর্মকর্তা ফারুক আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি থেকে নামতেন। ঈদের পর একদিন তিনি বারান্দা পার হয়ে সিঁড়ির দিকে যান। তিনি সিঁড়ির কাছ থেকে ফিরে মহিতুলের অফিস কক্ষের কাছে ফিরে আসেন এবং জানতে চান ঈদের তিনদিন পরও মুহিত কেন গ্রামের বাড়িতে যাননি। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শুধু দেশই চালাতেন যে তা নয়। তার সব কর্মচারী, সহকর্মী, সহযোগীর ব্যক্তিগত খবরাখবরও রাখতেন, দুঃখ-সুখ, আনন্দ-বেদনার খবর রাখতেন। এ কারণেই হয়তো তিনি হয়ে উঠেছেন জাতির পিতাÑ মন্তব্য মুহিতের।
অন্যবারের মতো এবারও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ‘শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক মাসব্যাপী শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।
এতে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত কবিতা ও গল্পের উপর ভিত্তি করে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ৩নং গ্যালারিতে বরেণ্য শিল্পীদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে। পয়লা আগস্ট সকালে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে শিল্পী বীরেন সোম, আহমেদ সামসুদ্দোহা, শেখ আফজাল, শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, মো. কামাল উদ্দিন, ময়াজ উদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, মাকসুদুল আহসানসহ ১৪৮ জন শিল্পীর ১৫০টি চিত্রকর্ম। এর মধ্যে রয়েছে শিল্পী প্রদ্যুৎ কুমার দাসের ১টি ভাস্কর্য শিল্প। প্রদর্শনী প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা থাকবে।
এছাড়াও মাসব্যাপী আয়োজনে আরও আছে ৫ থেকে ৩১ আগস্ট জাতীয় চিত্রশালার ২নং গ্যালারিতে বঙ্গবন্ধুর উপর শিশুদের অঙ্কিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, ৪নং গ্যালারিতে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ১ থেকে ১২ আগস্ট ৪৯০টি উপজেলা ও ৬৪ জেলায় এবং ঢাকা মহানগরীতে ১২ আগস্ট শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ১১ থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত একাডেমি প্রাঙ্গণে ফকির লালন সাঁইজির ঘরানার ভাবশিষ্যদের ভাবগীত পরিবেশিত হবে।
এরমধ্যে ১১ আগস্ট বাউল শিল্পীদের রেজিস্ট্রেশন, মহড়া, গুরুকর্ম এবং সংগীতানুষ্ঠান ‘আয়না মহল’, ১২ আগস্ট সেমিনার, সংগীতানুষ্ঠান ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’, ১৩ আগস্ট বাউল সংগীত কর্মশালার উদ্বোধন এবং সংগীতানুষ্ঠান ‘সত্য বল সুপথে চল’ এবং ১৪ আগস্ট একাডেমি থেকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার- মানবতার গান গেয়ে র্যালি।
১২ আগস্ট একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধুর গল্প শোন’ শিরোনামে গল্প বলার আসর, গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর উপর শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত গান ও কবিতার উপর ভিত্তি করে আর্ট ক্যাম্প। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক প্রদান ও শিশুদের অঙ্কিত চিত্রকর্ম ও বরেণ্য শিল্পীদের চিত্রকর্ম নিয়ে গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়ায় প্রদর্শনী।
১৫-১৬ আগস্ট একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় বঙ্গবন্ধুর উপর আলোচনা ও সাংস্কতিক অনুষ্ঠান, ১৫-১৭ আগস্ট একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় বঙ্গবন্ধুর উপর নির্মিত চলচ্চিত্র নিয়ে প্রদর্শনী হবে।