মাহবুব আলম
পিতা, তুমিহীন এই বাংলা আজ ভুতুড়ে শ্মশান
বারবার মাটি ফুঁড়ে জন্ম নিচ্ছে
শত-শত অলৌকিক প্রেতাত্মা আচানক,
আজ যেখানেই চোখ রাখি
সেখানেই শুধু অন্ধকার,
মানুষের ধূসর মানচিত্র;
গভীর খাদে আটকে গেছে স্বদেশের চাকা
কোথাও কোন উদাস বিকেল নেই, স্নিগ্ধ ভোর নেই
রাত্রির সৌন্দর্য বিলীন, বৃষ্টিহীন প্রান্তর
দাউ-দাউ পুড়ছে তোমার বাংলার সবুজ বৃক্ষরাজি
তুমিহীন পিতা,
সর্বত্র-ই আঁধারের ঘনঘটা;
পিতা, তুমি ছাড়া জাতি আজ
কাণ্ডারীছিন্ন জাহাজের মতো দিশেহারা
তোমার প্রিয় মুক্তিযোদ্ধারা কবরের স্তব্ধতা বুকে ধারণ করে
বেবাক তাকিয়ে দেখছে পশুদের তুমুল নৃত্য,
আজ রাজাকার আর স্বৈরাচার সব মিলে একাকার;
পিতা, আর কতো চোখ বুজে থাকবো অন্ধ মূর্তির মতো
আর কতো কানে চেপে রাখবো বিষাদের বিশাল পাথর,
পিতা, কার কাছে বলবো আজ দুঃখের কথা-বেদনার কথা
পিতা, কার কাছে তুলে ধরবো আজ
আমার গুরুতর অভিযোগগুলো
পিতা, আজ রাজাকারের প্রশস্ত কপাল জুড়ে উড়ছে
তোমার স্বাধীন-স্বদেশের রক্তাক্ত পতাকা;
পিতা, কতো কিছু হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত তোমার ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে
তুমি কি দেখতে পাচ্ছো কিংবা শুনতে পাচ্ছো আমাদের অনুনাদ,
তোমাকে কিন্তু ভীষণ বকবো আড়ালে,
তুমি কি এভাবে লুকিয়ে থাকবে অনন্তকাল:
আমি সর্বক্ষণ দেখতে পাই তুমি শুয়ে আছো বিশাল মানচিত্র জুড়ে;
এদেশের নদীর কলকল শব্দে শুনতে পাই তোমার নাম
এদেশের পাখির কণ্ঠে শুনতে পাই তোমার গান
এদেশের আকাশে-সবুজ মাঠে দেখতে পাই তোমার রাঙা পোস্টার
পিতা, তুমি একবার এসে দেখে যাও আমরা কী দারুণ অসহায়
পিতা, তুমি আর একবার এসে বলে যাও—
এদেশ আমার, আমাদের, মুক্তিযোদ্ধার, বাঙালীর;
স্বৈরাচার কিংবা রাজাকারের নয়।