মিজানুর রহমান খান
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেমন, তেমনই দেশ পুনর্গঠনেও সোভিয়েত ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের শুরুতে সোভিয়েত সরকারের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত কথোপকথনের (বাংলাদেশের স্বীকৃতি, যুদ্ধাপরাধের বিচার, গণতন্ত্রের পথে সমাজতন্ত্র ইত্যাদি) বিবরণ এর আগে প্রকাশিত হয়নি। এবারই তা প্রথম জানা যাবে অবমুক্ত করা ১৯৭২ সালের দুটি গোপন সোভিয়েত কূটনৈতিক নথি থেকে। বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবার্ষিকীতে এ বিষয়ে প্রথম আলোয় দুটি প্রতিবেদনের আজ পড়ুন দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি।
সোভিয়েত আমলের গোপন নথিতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ শেষে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে সোভিয়েত নেতারা বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অধিকাংশ বিষয়ে সোভিয়েত দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত হলেও পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে তিনি তাঁর আপসহীন মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রথম সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত ভি এফ পাপোভ ঐতিহাসিক সিমলা বৈঠকের দুদিন আগে ভারত-পাকিস্তানের মনোভাব মূল্যায়ন এবং সে বিষয়ে সোভিয়েত দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে ১৯৭২ সালের ২৯ জুন ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ২০১৬ সালের মে মাসে মস্কোতে গিয়ে রুশ তথ্য অধিকার আইনের আওতায় এই প্রতিবেদকের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মস্কোর অন্যতম জাতীয় মহাফেজখানা (রাশিয়ান স্টেট আর্কাইভ অব কনটেম্পরারি হিস্ট্রি) কর্তৃপক্ষ অবমুক্ত করা বাংলাদেশবিষয়ক কিছু গোপন নথির ফটোকপি প্রথম আলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে দিয়েছে।
১৯৭২ সালের ২ জুলাই ‘উপমহাদেশে স্থিতি’ আনতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো সিমলায় একটি চুক্তি সই করেছিলেন। বাংলাদেশে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত পাপোভ ঢাকা থেকে মস্কোতে পাঠানো বার্তায় লেখেন, ‘আমি শেখ মুজিবুর রহমানকে এই সত্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করালাম যে বর্তমান পরিস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হলে তা উপমহাদেশের রাজনৈতিক সমঝোতার পথ জটিলতর করে তুলবে।’
এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সিমলাপ্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তিনি দুই দেশের (ভারত-পাকিস্তান) মধ্যকার রাজনৈতিক সুরাহার ক্ষেত্রে কোনো রূপ বাধা হতে চান না। তাই তিনি ‘পরবর্তী কোনো সময়ে’ বিচার সম্পাদনের লক্ষ্যে বিচার স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাষ্ট্রদূত পাপোভ এ বিষয়ে মস্কোতে পাঠানো বার্তায় ইঙ্গিত দেন যে শেখ মুজিব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করার বিষয়ে বিদ্যমান বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েছেন। কিন্তু পাপোভের ভাষায়, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে এই ধারণা দিয়েছেন যে তাঁর জনগণের আকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে পুরোপুরি সরে আসা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না। মুজিবের নিজের কথায়, ‘বাংলাদেশ সরকার ১০০ থেকে ১২৫ জনের বেশি লোকের বিচারের
পরিকল্পনা করছে না। আর সেটা হবে একটি উন্মুক্ত বিচার। আদালতের শুনানিকালে বিদেশিরা যাতে উপস্থিত থাকতে পারেন, সরকার তেমন একটি ব্যবস্থা করবে।’ পরে যদিও ১৯৫ জনের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছিল। পাকিস্তান বলেছিল, তারা বিচার করবে। কিন্তু কখনো করেনি।
ত্রিদেশীয় বন্ধুত্বের রূপরেখা
১৯৭২ সালের ২২-২৪ জুন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী আজিজ আহমেদ ভুট্টোর বিশেষ দূত হিসেবে মস্কো সফর করেছিলেন। রাষ্ট্রদূত পাপোভ সোভিয়েত নেতাদের সঙ্গে আজিজের বৈঠকের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবকে অবহিত করেন। তবে এই নথিতে পরিষ্কার যে বঙ্গবন্ধু
ভুট্টোর কালক্ষেপণের কূটকৌশল সম্পর্কে পাপোভকে সতর্ক করেছিলেন।
পাপোভ লেখেন, ‘আমি মুজিবকে বললাম, আজিজ মস্কোতে আলেক্সেই কোসিগিন, আন্দ্রেই গ্রোমিকো ও এন.পি. ফিরুবিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি তাঁদের কাছে পরিষ্কার করেন যে ভুট্টো এটা অনুভব করেন, বাংলাদেশের স্বীকৃতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মুজিবের সঙ্গে তাঁর একটি প্রাথমিক বৈঠকই এই পদক্ষেপের জন্য সহায়ক হবে। চলতি বছরের আগস্টে জাতীয় পরিষদের বৈঠকে তা পেশ করা হবে। এরপর তিনি বিষয়টির ওপর গণভোট করবেন। তবে এ মুহূর্তে তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো যুদ্ধবন্দীদের প্রত্যাবাসন। সোভিয়েত নেতারা এ ধারণা পেয়েছেন যে ভুট্টো যদিও কৃত্রিমভাবে যুদ্ধবন্দী থেকে অন্যান্য বিষয়কে আলাদা করতে চাইছেন, কিন্তু সেটা যে কতটা অবাস্তব, সেটাও বিলক্ষণ তাঁর জানা আছে। তবে ভারত যদি দ্রততার সঙ্গে একটি ছোট দলের প্রত্যাবাসনও শুরু করে, তাহলে সেটা ভুট্টোর অবস্থানকে শক্তিশালী করে। বাংলাদেশের আদালতে যুদ্ধবন্দী কিংবা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যেসব বেসামরিক ব্যক্তি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেছে, তাদের বিচারের বিষয়ে পাকিস্তানি জনমত ভয়ানকভাবে নেতিবাচক, যা শুরু করা হলে সিমলাপ্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে পাকিস্তানকে নিকটতম ভবিষ্যতেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে হবে—এটাই সোভিয়েত অবস্থান।
পাপোভ এরপর আরও লেখেন, ‘আমি এসব আলোচনার পরে ভাবলাম, চীনে আজিজ আহমেদের সবশেষ সফর সম্পর্কে জানাটাও মুজিবের জন্য কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হতে পারে। আজিজ সোভিয়েতকে যা বলেছেন, ঠিক একই বিষয় চৌ এন লাইকেও বলেছেন। চৌ বলেছেন, চীন শক্তিশালী ও স্বাধীন পাকিস্তানের পক্ষে। এসব বিষয় বলার পরে পাপোভ সরাসরি মুজিবের মন্তব্য শুনতে চান। মুজিব বলেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘একটি খাঁটি শান্তির অঞ্চল’ সৃষ্টির পক্ষে দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। সিমলাপ্রক্রিয়ায় ভারত ও পাকিস্তান তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা দূর করতে পারার সাফল্যটাই বাংলাদেশ দেখতে উদ্গ্রীব। তবে তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, পাকিস্তান তার দুমুখো নীতি ত্যাগ করেনি। একদিকে ভুট্টো দাবি করছেন যে তিনি বিশ্বস্ততার সঙ্গে শান্তি চাইছেন, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অস্ত্রে সে নিজেকে পুনরায় সামরিকীকরণে মেতেছে। মুজিব বলেন, সিমলাপ্রক্রিয়ার সাফল্য দেখতে হলে পাকিস্তানকে অবশ্যই কাশ্মীর ইস্যু, পারস্পরিক সীমানা বিরোধের সুরাহা, ভারতের সঙ্গে একটি ব্যাপকভিত্তিক শান্তি চুক্তি করা এবং অনতিবিলম্বে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া—এই কাজগুলো করতে হবে। বাংলাদেশ পাকিস্তানের জন্য অতিরিক্ত চাপের কারণ হবে না, তার বিরুদ্ধে কোনো প্রচারণা চালাবে না। পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনেও মদদ দেবে না।
বঙ্গবন্ধু এ সময় পাপোভকে এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেন, ‘বাংলাদেশের সম্মতি ছাড়া ভারত যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। কারণ, পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীরা ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল।’
চীনা মনোভাব সম্পর্কে নতুন তথ্য
এতকাল এমন জল্পনাকল্পনা ছিল যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই সম্পর্ক উন্নয়নের আগ্রহ ব্যক্ত করেছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে, বাহাত্তরের গোড়াতেই তেমন একটি অগ্রগতির সত্যতা শেখ মুজিব সোভিয়েতদের কাছে স্বীকার করে গেছেন। আবার সোভিয়েত রাষ্ট্রদূতের কাছে বঙ্গবন্ধু মুজিব সম্ভাব্য চীনা ভেটো মোকাবিলায় একটি বীরোচিত বিকল্প সংকল্পও ব্যক্ত করেছিলেন।
উল্লেখ্য, চীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। বাহাত্তরের আগস্টে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের আবেদনে চীনের কৌশলগত ভেটোদানের বিষয়টি মানুষ আজও ভোলেনি এবং তখন সেটাই বেশি প্রচার লাভ করেছিল।
এখন সোভিয়েত আমলের অবমুক্ত করা নথিতে দেখা যায়, চীনের সঙ্গে মুজিবের সম্পর্ক কেমন, সে বিষয়ে সোভিয়েতদের মনে গোড়াতেই কৌতূহল দেখা গিয়েছিল। রাষ্ট্রদূত পাপোভ মুজিবের কাছে সরাসরি তা জানতেও চান। তখন, পাপোভের ভাষায়, ‘প্রধানমন্ত্রী মুজিব দাবি করেছেন যে চীনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রক্ষাকে বাংলাদেশ সমর্থন করে না। তবে তিনি স্বীকার করেন যে চীনে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত কে এম কায়সার বাংলাদেশ থেকে পাট কেনা শুরু করার বিষয়ে চীনের কাছ থেকে একটি বেসরকারি ফরমাশপত্র জোগাড় করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত চীনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো অনুরোধ পাওয়া যায়নি।’
সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত আরও লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মুজিব আমাকে আরও বললেন, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এর বেশির ভাগের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই।’
পাপোভ এ পর্যায়ে মন্তব্য করেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ঢিলেঢালাভাবে মন্তব্য করছিলেন। আমি অনুভব করলাম যে তিনি এ বিষয়ে সরাসরি উত্তর দেওয়া এড়িয়ে চলছেন। এ প্রসঙ্গে শেখ মুজিব আমাকে আরও বলেন, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানানোর আগ্রহ ব্যক্ত করে রোমানিয়া সরকারের একজন প্রতিনিধি আজই (২৯ জুন, ১৯৭২) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছা জানিয়ে ভদ্রলোক একটি চিঠিও বয়ে এনেছিলেন। রোমানীয় প্রতিনিধির সফর সম্পর্কে শেখ মুজিব মন্তব্য করেন, ‘কখনো না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়া ভালো’ (লুচশে পোজদ্না চিয়েম নি কাগদা)। একই সঙ্গে তিনি ওই চিঠির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে আমাকে জানিয়ে দিলেন, ‘চীন সরকারের প্রভাবের কারণে রোমানীয় সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।’ উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাই চচেস্কুর প্রেরিত বিশেষ দূতের চিঠিতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের কথাই বলা ছিল। কারণ, বাংলাদেশের সঙ্গে রোমানিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের তারিখ ২৯ জুন, ১৯৭২। একটি মার্কিন নথি অনুযায়ী, চচেস্কু ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধুকে তাঁর দেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
চীনকে পরোক্ষ হুঁশিয়ারি
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার অ্যালেক ডগলাস–হিউম ১৯৭২ গোড়ায় বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। রাষ্ট্রদূত পাপোভ বঙ্গবন্ধুর কাছে জানতে চান, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই সফরের উদ্দেশ্য কী ছিল। উত্তরে বঙ্গবন্ধু পাপোভকে বলেন, স্যার অ্যালেক তাঁর কাছে উপমহাদেশ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চান এবং একটি প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবটি হলো, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে লন্ডনে একটি বৈঠকের মধ্যস্থতা করতে চায়। তখন বঙ্গবন্ধু স্যার অ্যালেককে জানিয়ে দেন, পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতায় পৌঁছার কোনো প্রশ্নই আসে না। স্যার অ্যালেকের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এ কথাও পরিষ্কার করেন যে জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে চীন যদি নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দেয়, তাহলে বাংলাদেশ সরকার তার বন্ধুদেশগুলোর কাছে পাকিস্তানের সদস্যপদ বাতিলের দাবি তুলবে। তার ভিত্তি হবে এটাই যে সাবেক পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই বাংলাদেশে বাস করে। আর সে কারণে বাংলাদেশ একটি উত্তরাধিকারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
সংবিধান ও শৃঙ্খলা
সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত সেদিনের আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর কাছে বাংলাদেশ সংবিধানের খসড়ার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন, খসড়া সংবিধান অনুমোদনের জন্য সম্ভবত গণপরিষদে আগস্টে পেশ করা হবে। সংবিধান প্রকাশে বিলম্বের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সংবিধানের কিছু বিধান নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে।
পাপোভ তাঁর এই বার্তার উপসংহারে লেখেন, ‘শেখ মুজিব দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির বিষয়ে একটি ইতিবাচক মূল্যায়ন তুলে ধরেন। গত এপ্রিল ও মে মাসের সংকট কাটিয়ে উঠে এখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে। সামনের মাসগুলোতে মুজিব দেশের আইনশৃঙ্খলা একটি সুষ্ঠু অবস্থায় ফেরাতে সক্ষম হবেন বলে আস্থা ব্যক্ত করেন।’