সবাই কথা বলে, কাজ করে না


মিজানুর রহমান খান

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেমন, তেমনই দেশ পুনর্গঠনেও সোভিয়েত ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের শুরুতে সোভিয়েত সরকারের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত কথোপকথনের (বাংলাদেশের স্বীকৃতি, যুদ্ধাপরাধের বিচার, গণতন্ত্রের পথে সমাজতন্ত্র ইত্যাদি) বিবরণ এর আগে প্রকাশিত হয়নি। এবারই তা প্রথম জানা যাবে অবমুক্ত করা ১৯৭২ সালের দুটি গোপন সোভিয়েত কূটনৈতিক নথি থেকে।

১৯৭২ সালের মে মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত ভি এফ পাপোভের সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ আলোচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের পরিস্থিতির একটা মূল্যায়ন করেছিলেন। তিনি দুঃখ করে তাঁকে বলেছিলেন, দেশের প্রশাসনিক যন্ত্র খারাপ। মন্ত্রীরা বিদেশে যেতে আগ্রহী। আর সবাই শুধু কথা বলে, কাজ করে না। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় এদিন তিনি প্রয়োজনে দলে ‘অস্ত্রোপচার’ চালানোর মতো সংকল্পও ব্যক্ত করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু পাপোভকে আরও বলেছিলেন, মার্কিনরা তাঁকে পাঁচ বছরের জন্য বড় অঙ্কের আর্থিক সাহায্য দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ‘রাজনৈতিক শর্তের শৃঙ্খলে বাধা পড়ার আশঙ্কা’য় তিনি তা নেননি। এই শিক্ষা তিনি অক্টোবর বিপ্লব থেকে নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: ‘আমি প্রয়োজনে আরও তিন থেকে পাঁচ বছর দুঃখ-কষ্ট সহ্য করব। কিন্তু কোনো ধরনের রাজনৈতিক শর্তসাপেক্ষ সাহায্য নেব না।’

১৯৭২ সালের মে মাসে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কী ছিল এবং তার আশু করণীয় কী, সে বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত ভি এফ পাপোভের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা হয়েছিল। সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত বঙ্গবন্ধুর সেই বাংলাদেশ মূল্যায়নের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ১৬ মে ১৯৭২ একটি ‘সিক্রেট’ বার্তা মস্কোতে পাঠিয়েছিলেন।

২০১৬ সালের মে মাসে মস্কো গিয়ে রুশ তথ্য অধিকার আইনের আওতায় এই প্রতিবেদকের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ান স্টেট আর্কাইভ অব কনটেম্পোরারি হিস্ট্রি–এ রক্ষিত বাংলাদেশ-বিষয়ক কিছু গোপন নথির ফটোকপি প্রথম আলো আনুষ্ঠানিকভাবে পেয়েছে।

 জাতিসংঘ ও ভারত

সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত পাপোভ বঙ্গবন্ধুর কাছে বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। এর উত্তরে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রদূতকে বলেছিলেন, ‘খাদ্য সমস্যা এখন তাঁর (বঙ্গবন্ধু) জন্য সবচেয়ে জটিল সমস্যা। তাঁর কথায়, রাষ্ট্রীয় তহবিলগুলো নিঃশেষ হয়ে গেছে। দেশ এখন সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল জাতিসংঘ ও ভারতের সাহায্যের ওপর। খাদ্য সমস্যা আগামী নভেম্বরে ধান পাকা পর্যন্ত চলবে। প্রধানমন্ত্রী (শেখ মুজিবুর রহমান) জোর দিয়ে বলেন, তিনি নিশ্চিত যে সোভিয়েত ইউনিয়নে যদি ফসলহানি না ঘটে তাহলে সোভিয়েত সরকার বাংলাদেশকে খাদ্যসাহায্য দেবে।’   

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় সোভিয়েত রাষ্ট্রদূতের সেদিনের আলোচনার আরেকটি বিষয় ছিল পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের আচরণ। রুশ রাষ্ট্রদূত বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেন যে, কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভুট্টো ইসলামাবাদে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন, পাকিস্তানের সব নাগরিকের মতো বাঙালিরাও সমান অধিকার ভোগ করছেন। ভুট্টো পাকিস্তানে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূতকে সরেজমিনে পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান। ভুট্টোর ভাষায়, বাঙালিরা ‘কখনো কোনো হয়রানির শিকার হননি।’ বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সোভিয়েত সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং তাদের প্রত্যাবাসন আরও ত্বরান্বিত করার তাগিদ দেন। বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন যে পাকিস্তানে ২৭টি বন্দিশিবির রয়েছে এবং সেগুলোর তালিকা শিগগিরই সোভিয়েতদের কাছে সরবরাহ করা হবে। পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু সোভিয়েত রাষ্ট্রদূতকে বলেন, তিনি ব্যাপক সংখ্যায় বিচার করার পক্ষপাতী নন। তথ্যটি গোপন রাখার শর্তে বঙ্গবন্ধু তাঁকে বলেন, ‘এক হাজারের বেশি হবে না। হয়তো ৪০০ বা এর কাছাকাছি হবে।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত হিসেবে ডি পি ধরের (একাত্তরে সোভিয়েত ইউনিয়নে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত) ১৯৭২ সালের ১৫ মে বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে মুজিব নীরবতা পালন করেন। শুধু বলেন, পাকিস্তান-ভারত শীর্ষ বৈঠকের অনুকূল পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি।

 আওয়ামী লীগে অস্ত্রোপচার

রাষ্ট্রদূত পাপোভ ছাত্রলীগের ভাঙন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর মূল্যায়ন জানতে চান এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, এর ফলে মূল দল আওয়ামী লীগেরও ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে কি না। উত্তরে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ছাত্রলীগ ভেঙেছে ছাত্রনেতাদের অতিরিক্ত বদমেজাজের ফলে। তবে তিনি মনে করেন, ছাত্রলীগের ভেতরের উত্তেজনা কালক্রমে থিতিয়ে আসবে, সংগঠনটির নেতারা আবার একসঙ্গে কাজ করবেন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রদূতকে বলেন, আওয়ামী লীগের ভেতরে ঐক্য অটুট আছে; কিন্তু যদি অসন্তোষ দেখা দেয় তাহলে তিনি দলটিতে ‘অস্ত্রোপচার’ (খিরুরগিচেস্কায়া অপেরাৎসিয়া) চালাবেন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রদূতকে জানান, তিনি যখন আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন, তখন এ ধরনের অস্ত্রোপচারের সাহায্যে ভাসানী গ্রুপ ও আতাউর রহমান খানের গ্রুপকে আলাদা করেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে ৫৭ জনকে বহিষ্কার করেছেন, এবং প্রয়োজন হলে আরও বহিষ্কার করবেন।

 ‘সবাই বলে, কিন্তু কেউ কিছু করে না’

রাষ্ট্রদূত পাপোভ বঙ্গবন্ধুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র নির্মাণের কাজ কেমন চলছে। উত্তরে বঙ্গবন্ধু তাঁকে বলেন, সত্যিকারের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের একমাত্র উপায় বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা; এর প্রয়োজনীয়তা তিনি বেশি করে অনুভব করছেন। রাষ্ট্রদূত তাঁর বার্তায় লিখেছেন, ‘তাঁর (বঙ্গবন্ধু) কথা অনুযায়ী, তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস খতিয়ে দেখছেন, এবং তিনি মনে করেন যে এখন বাংলাদেশ সেই রকমের সমস্যাবলির মুখোমুখি, অক্টোবর বিপ্লবের ঠিক পরের বছরগুলোতে যে ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছিলেন ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন। এম রহমান (বঙ্গবন্ধু) রাষ্ট্রগঠনে, ক্ষুধা ও ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবিলায় এবং শিল্প উৎপাদনের ভিত্তি স্থাপনে লেনিনের অবদানের উচ্চ মূল্যায়ন করেন, এবং জোর দিয়ে বলেন যে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের এই সমস্ত অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন।’

রাষ্ট্রদূত পাপোভ তাঁর বার্তায় আরও লেখেন, বঙ্গবন্ধু তাঁকে এ কথাও বলেন যে প্রত্যাশা সত্ত্বেও সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মধ্যে যথাযথ ভারসাম্য বজায় রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। পাপোভ বঙ্গবন্ধুর কথা উদ্ধৃত করেন: ‘আমি যদি গুরুত্বের সঙ্গে সমাজতন্ত্র নির্মাণের কাজ শুরু করি, তাহলে সব সময় গণতন্ত্রের জন্য জায়গা থাকবে না। আবার যদি গণতন্ত্রকেই মনোযোগের প্রধান বিষয় করি, তাহলে সমাজতন্ত্র নির্মাণের কাজ সঙ্গে সঙ্গে থেমে যাবে। সবাই কথা বলে, কিন্তু কেউ কিছু করে না।’ রাষ্ট্রদূত পাপোভ এ বিষয়ে আরও লেখেন, বঙ্গবন্ধু তাঁকে বলেছেন যে তিনি আপাতত গণতন্ত্রের সাহায্যেই সমাজতন্ত্র নির্মাণের চেষ্টা করছেন। কিন্তু জটিলতা যদি চলতেই থাকে, তাহলে তাঁকে কিছু কিছু গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ত্যাগ করে সমাজতন্ত্র নির্মাণের কাজেই সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। তিনি এই মত ব্যক্ত করেন যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নেতারা যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য দেশের সমাজতন্ত্র বিনির্মাণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানা-বোঝার চেষ্টা করতেন, তাহলে তাঁরা উপকৃত হতেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে সে রকম কোনো চেষ্টা নেই।

 মন্ত্রীদের বিদেশভ্রমণে উষ্মা

পাপোভ লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব তাঁকে বলেছেন, তিনি বিদেশভ্রমণে খুব উৎসাহী মন্ত্রীদের থামিয়ে রেখেছেন। কারণ, দেশে পরিবহন, শিল্প এবং রাষ্ট্রের আরও নানা ক্ষেত্রে এখনো অনেক কাজ করা বাকি পড়ে আছে। এসব সারতে আরও তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে। এরপর মন্ত্রিসভার সদস্যরা বিদেশে যেতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, যদি সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশে গিয়ে সমাজতান্ত্রিক কাঠামো সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করার সময় আপাতত না পান, তাহলে সমাজতান্ত্রিক দেশ থেকে বিশেষজ্ঞ আমন্ত্রণ করে এনে তা অর্জন করার উচিত হবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সোভিয়েতের তরফ থেকে সাহায্যের আশ্বাস সত্ত্বেও তাঁরা অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা অধ্যয়নের এখনো পর্যন্ত একটি ইনস্টিটিউট বা ফ্যাকাল্টি খুলতে পারেননি।

 রুশ ব্যক্তিগত পরামর্শক

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে ভারত ও রাশিয়ার বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানোর বিষয়ে স্বাধীনতার পরপরই বিভিন্ন মহলে এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা ধরনের আলোচনা ছিল। ১৯৭২ সালের ১৬ মের এই নথিটি ছাড়া ২৯ জুন ১৯৭২ সালের একটি নথিতেও দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু বিদেশি বিশেষজ্ঞ বা পরামর্শক আনার বিষয়ে খুবই অনাগ্রহী ছিলেন।

১৬ মের নথিতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রদূত পাপোভকে বলেছেন, ‘দেশের প্রশাসনিক যন্ত্র খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। আজই যদি বিদেশি বিশেষজ্ঞরা আসেন, তাহলে জনপ্রশাসনের অকার্যকরতার পুরো দায় তাঁরা তাঁদের ওপর চাপিয়ে দেবেন। স্থানীয় প্রশাসনের সব ভুলভ্রান্তির জন্য বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দোষারোপ করা হবে।’

১৯৭২ সালের ২৯ জুন সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত সিমলা শীর্ষ বৈঠক সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুর কাছে সোভিয়েত সরকারের মনোভাব ব্যাখ্যা করতে গিয়েছিলেন। সেদিনও আলোচনায় বঙ্গবন্ধু নিজেই প্রসঙ্গটি তোলেন। এ বিষয়ে পাপোভ লেখেন, ‘মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন সংস্থা যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব বুঝে নিতে পারেনি। এখনো পর্যন্ত তারা তাদের কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করতে পারেনি।’ তবে বঙ্গবন্ধু এ বিষয়ে সোভিয়েত পক্ষকে কোনোভাবে ক্ষুণ্ন করতে চাননি বলেই প্রতীয়মান হয়। কারণ, সোভিয়েত রাষ্ট্রদূতের কাছে তিনি দুজন রুশ ব্যক্তিগত উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব বলেন, সোভিয়েত দূতাবাসের স্টাফ হিসেবে তিনি দুজন রুশ পরামর্শককে আশা করেন, যাঁদের তিনি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তাঁর ব্যক্তিগত উপদেষ্টা হিসেবে কাজে লাগাতে পারেন। রাষ্ট্রদূত পাপোভ প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের এই অনুরোধের বিষয়ে মস্কোকে অবহিত করার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

 কমিউনিস্ট পার্টি-আওয়ামী লীগ সম্পর্ক

১৯৭২ সালের ১৬ মে বার্তায় রাষ্ট্রদূত পাপোভ লেখেন, এর আগে প্রধানমন্ত্রী মুজিব সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক দৃঢ় করার কথা বলেছিলেন। সেদিন প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে এ দুই দলের মেলবন্ধন স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপার। কারণ, উভয় দলই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব রাষ্ট্রদূত পাপোভের কাছে দুই দেশের মধ্যে প্রতিনিধি বিনিময়ের আগ্রহ ব্যক্ত করেন, তবে সেটার জন্য দুই-তিন মাস অপেক্ষা করতে বলেন। কারণ, এই মুহূর্তে তিনি দল পুনর্গঠনের কাজ করছেন, দলের নেতারা সেই কাজে ব্যস্ত আছেন। রাষ্ট্রদূত পাপোভ প্রধানমন্ত্রী মুজিবের কাছে আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও লাল বাহিনীর (সরকার-সমর্থক শ্রমিক লীগ) মধ্যকার পার্থক্য জানতে চান। শেখ মুজিব পাপোভকে বলেন, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী তাঁর ডান হাত, আর লাল বাহিনী বাম হাত। তিনি দেশের রাজনৈতিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজে পুলিশের শরণাপন্ন না হয়ে এ দুই সংগঠনের সহযোগিতায় তা করতে চান।

 বেগম মুজিবকে আমন্ত্রণ

সোভিয়েত সরকার বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরের আমন্ত্রণ আগেই দিয়েছিল। ১৯৭২ সালের ১৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত পাপোভের সাক্ষাতের দিন পাপোভ সে কথা প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব পাপোভকে বলে, বেগম মুজিব জুন-জুলাই মাসে সফরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তিনি নির্দিষ্ট তারিখ স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার পর রাষ্ট্রদূতকে জানাবেন বলে বলেন।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব ও বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, বেগম মুজিব একা সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরে যাননি; পরে বঙ্গবন্ধু অস্ত্রোপচারের জন্য মস্কো সফরে গেলে বেগম মুজিবও তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন।

SUMMARY

100-1.jpg

সোভিয়েত নেতা ব্রেঝনেভের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মস্কো, ৩ মার্চ ১৯৭২